বাংলাদেশের ওপর ভারতের নতুন চাপ: সীমান্ত দিয়ে পাট ও সুতা আমদানি নিষিদ্ধ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং কৌশলগত প্রভাব বিস্তার করতে সীমান্ত বাণিজ্যে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করছে ভারত (India)। সর্বশেষ পদক্ষেপে ২৭ জুন দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক ঘোষণায় জানান, সীমান্তের যেকোনো স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পাট, বোনা কাপড় ও সুতা জাতীয় পণ্যের আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি–র বরাতে জানা যায়, নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় রয়েছে—পাটজাত পণ্য, একাধিক ভাঁজের বোনা কাপড়, একক শণ সুতা, ব্লিচ না করা বোনা পাটের কাপড় ইত্যাদি। বলা হয়েছে, এসব পণ্য শুধু মাত্র মুম্বাইয়ের নহাভা শেভা বন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। সীমান্তবর্তী স্থলবন্দর—যেগুলো বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর এবং খরচ সাশ্রয়ী—সেগুলো এখন সম্পূর্ণ বন্ধ।

এই সিদ্ধান্তকে বিশেষজ্ঞরা শুধু বাণিজ্যিক নয়, রাজনৈতিক চাপে রূপান্তরিত একটি কৌশল বলেই দেখছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই নয়াদিল্লি এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যার মাধ্যমে তারা একদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আঘাত করছে, অন্যদিকে নীতিনির্ধারকদের ওপর নিজেদের ইচ্ছামতো প্রভাব খাটাতে চাইছে।

উল্লেখযোগ্য যে, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাট উৎপাদক হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিতে বাংলাদেশের আধিপত্য। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাট উৎপাদক এবং রপ্তানিতে শীর্ষে। ভারত একাধিকবার এই প্রতিযোগিতাকে ঠেকাতে একতরফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

এর আগে চলতি বছরের মে মাসেও ভারত ঠিক একই কৌশল নিয়েছিল। তখন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু মহারাষ্ট্রের নহাভা শেভা ও কলকাতা বন্দর দিয়ে আমদানির সুযোগ রাখা হয়—যা রপ্তানিকারকদের জন্য ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশ ভারতে বছরে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। সীমান্ত আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় পোশাক খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ছে। এবার পাট ও সুতা খাতে একই রকম চাপ সৃষ্টি করল ভারত।

ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নেপাল ও ভুটানে রপ্তানির জন্য পণ্য পরিবহনে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। তবে তা পুনঃরপ্তানি করা যাবে না—এমন শর্তে কার্যত তা ঠেকানোই হলো। অর্থাৎ বাংলাদেশ যেন ভারতের ‘অনুমতি ছাড়া’ অন্য কোথাও লাভবান হতে না পারে, সেটিও নিশ্চিত করছে নয়াদিল্লি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন এই মুহূর্তে নয়াদিল্লির নিষেধাজ্ঞাগুলো কেবল অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং কৌশলগত চাপের অজুহাতে একটি প্রভাবশালী অবস্থান নিশ্চিত করার প্রয়াস।

সাবেক কূটনীতিকরা বলছেন, “ভারত চায় বাংলাদেশ নরম ও নির্ভরশীল অবস্থানে থাকুক। আর তাই অর্থনৈতিক শিরায় শিরায় এইভাবে চাপ প্রয়োগ করছে, যাতে নীতিনির্ধারকরা নির্দিষ্ট দিকেই হাঁটেন।”

এই অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক প্রতিবাদ, আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে ঐক্য এবং বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে জবাব দেওয়া জরুরি, নইলে ভারতের এই ‘চাপ রাজনীতি’ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *