চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনবে ইরান

ইসরাইলের সঙ্গে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর আপাতত যুদ্ধবিরতিতে গেছে ইরান (Iran)। তবে এই যুদ্ধবিরতি কতটা স্থায়ী হবে, তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক সংশয়। কারণ সংঘাত থামলেও ইরান বুঝে গেছে—তার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও বিমান প্রযুক্তি কতটা দুর্বল। আর সেই দুর্বলতাকে পুঁজি করেই আকাশ থেকে শুরুতেই ইরানের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয় ইসরাইল (Israel)। ফলে আগামী সম্ভাব্য সংঘাতে টিকে থাকতে চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে উন্নত অস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ইরান।

বিবিসি জানিয়েছে, যুদ্ধ চলাকালে ইরানের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান ঘাঁটিতেই ধ্বংস হয়ে যায়। আকাশে পাখা মেলবার আগেই সেগুলো মাটিতে মিশে যায়। অপরদিকে, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরাইলি বিমান শনাক্ত বা প্রতিহত করতে কার্যত ব্যর্থ হয়। ফলে যুদ্ধ শুরুর প্রথম পর্যায়েই আকাশপথে দখল নেয় তেলআবিব।

তবে সব দিক থেকে দুর্বল ইরান ইসরাইলকে চমকে দেয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায়। ইরানের মিসাইল শক্তি বিশ্বের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী। সংঘাতের সময় এই মিসাইল হামলাতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ইসরাইলের সামরিক ও অবকাঠামোগত কাঠামো।

তুরস্কভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মুরাত আসলান (Murat Aslan) মনে করেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইরান এখন বুঝে গেছে—নিজেদের টিকিয়ে রাখতে হলে সামরিক খাতে বড় বিনিয়োগ করতে হবে। তার মতে, “ইরানকে এখন তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমটি হচ্ছে—দেশটির ভেতরে প্রচণ্ড রাজনৈতিক বিভাজন ও দুর্বলতা। দ্বিতীয়ত, সামরিক অবকাঠামোর পুনর্গঠন এবং তৃতীয়ত, বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই প্রতিরক্ষা সহযোগী খোঁজা।”

এই প্রেক্ষাপটে ইরানের জন্য ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে রাশিয়া ও চীন। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই দেশ দুটি আগেও ইরানের পাশে থেকেছে—বিশেষত সামরিক ও প্রযুক্তি সহযোগিতায়। ইতিমধ্যেই রাশিয়া থেকে ইরান এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন ড্রোন প্রযুক্তি পেয়েছে। এবার আরও উন্নত যুদ্ধবিমান, রাডার সিস্টেম ও আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সংগ্রহে আগ্রহ দেখাচ্ছে তেহরান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ শুধু আত্মরক্ষার নয়, বরং ভবিষ্যৎ সংঘাতে ইরান যেন আকাশে টিকতে পারে, সেটাই বড় উদ্দেশ্য। কারণ ইসরাইলের সঙ্গে যেকোনো পুনরায় সংঘর্ষ হলে আকাশ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ভূমিতে থাকা শক্তিগুলোর টিকে থাকা কঠিন।

একইসঙ্গে, চীন ও রাশিয়ার কাছে সামরিক প্রযুক্তির জন্য ঝুঁকে পড়া মানে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে ইরানের অবস্থান আরও স্পষ্টভাবে ‘পূর্বমুখী’ হয়ে যাওয়া। এই অবস্থান তেহরানকে পশ্চিমা বলয়ের বাইরে ঠেলে দিলেও, তার প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরাইলের জন্য নতুন এক চাপ তৈরি করছে।

বিশ্ব পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ইরানের এই সামরিক পুনর্গঠন কেবল যুদ্ধের প্রস্তুতি নয়, বরং এক ধরনের ভূরাজনৈতিক বার্তা—“আমরা এখনও খেলায় আছি।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *