মুরাদনগরে হিন্দু নারী ধর্ষণ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার, ভিডিও ছড়ানোয় চারজন আটক

কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর-এ হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীর ওপর ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফজর আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে, ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আরও চারজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে গভীর রাতে, যখন ফজর আলী ভুক্তভোগীর ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা ৯(১)-এ মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনার পর এলাকাবাসীর রোষানলে পড়ে ফজর আলী গণপিটুনির শিকার হন এবং আহত অবস্থায় পালিয়ে যান। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।

কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মামলার তদন্ত দ্রুত গতিতে চলছে এবং প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে, ধর্ষণের পরের মুহূর্তে ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন ব্যক্তি মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন এবং সেটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে চারজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ঘটনার পরে ‘মুরাদনগর লাইভ টিভি’ নামের একটি ফেসবুকভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে ফজর আলীকে বিএনপি নেতা বলে প্রচার করা হয়, যা স্থানীয়ভাবে বিভ্রান্তি ও রাজনৈতিক উত্তেজনার জন্ম দেয়। তবে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও বাসিন্দারা নিশ্চিত করেছেন, ফজর আলী দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং এক স্থানীয় চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত।

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এই প্রচারকে “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর” বলে দাবি করা হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের মিডিয়া উইং উদ্দেশ্য করে বিএনপিকে সামাজিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান জানান, তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। রাজনৈতিক পরিচয় বা প্রভাব বিবেচনায় না নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও তিনি স্পষ্ট করেন।

ঘটনার পর এলাকায় চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে। তারা দ্রুত বিচার এবং ভবিষ্যতে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় এক প্রতিনিধি বলেন, “অপরাধী রাজনৈতিক নেতা হোক বা সাধারণ মানুষ—ন্যায়বিচার সবার জন্য সমান হওয়া উচিত।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *