রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ হওয়ার কথা থাকলেও তা অনুষ্ঠিত হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ -এ শুনানির দিন ধার্য থাকলেও ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় শুনানি পেছানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, জুলাইয়ের যেকোনো সময় অভিযোগ গঠন হতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে প্রসিকিউশন। এতে হত্যার সঙ্গে জড়িত ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। যদিও বৃহস্পতিবারই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে আজ (রোববার, ২৯ জুন) দিন নির্ধারণ করা হয়।
প্রতিবেদন জমার দিন ঘিরে বেরোবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ শিক্ষার্থী সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামের মুক্তি দাবিতে আন্দোলনে নেমে পড়ে। কিন্তু আন্দোলনে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এবং আওয়ামীপন্থী শিক্ষক উপস্থিত থাকায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। এই ঘটনায় শহীদ আবু সাঈদের পরিবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে মামলাটি করিনি। অন্য মামলার মতো ২০০ জনকে একসাথে আসামি করিনি। আমরা যাদের প্রকৃতভাবে দায়ী মনে করেছি, কেবল তাদের নামই দিয়েছি।”
তিনি আরও দাবি করেন, তদন্তে সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং তদন্ত সংস্থার কাছে তার বিরুদ্ধে কল রেকর্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট রয়েছে বলে তারা অবগত।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আবু হোসেন বলেন, “আপনারা কেবল উপরের ঘটনাগুলো দেখেছেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে কত ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে, সেসব কি জানেন?” তিনি বলেন, “এইভাবে চলতে থাকলে হয়তো একদিন আমাদের শেষ আশ্রয় থাকবে আল্লাহর দরবারেই ন্যায়বিচার প্রার্থনার জন্য।”
অন্যদিকে, আন্দোলনরত ছাত্রদের দাবি, প্রক্টর শরিফুল ইসলামের অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাস্তি দেবে। তবে তারা বলেন, “আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। সেই পুলিশি হত্যাকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অনুচিত।”
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেরোবির শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তার মৃত্যুর পর ১৮ আগস্ট তার পরিবার ১৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে অধিকতর তদন্তে আরও সাতজনের নাম যুক্ত করার আবেদন করা হয়। মামলাটি এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন, যেখানে একাধিকবার ট্রাইব্যুনালের টিম রংপুরে তদন্তে যায়।