বিমানবন্দরে আসিফের ব্যাগে গুলি-ভর্তি ম্যাগাজিন, প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা (ভিডিও সহ)

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া (Asif Mahmud Sozib Bhuiyan)-র সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগ থেকে গুলিভর্তি ম্যাগাজিন উদ্ধারের ঘটনাটি রোববার সকালে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। বিমানবন্দরের প্রি-বোর্ডিং স্ক্রিনিং পয়েন্টে ম্যাগাজিনটি ধরা পড়ার পর তিনি বিষয়টি “ভুলবশত” ঘটেছে বলে ব্যাখ্যা দেন এবং সেটি সঙ্গে থাকা প্রোটোকল কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেন।

আসিফ মাহমুদ টার্কিশ এয়ারলাইন্সের TK-713 ফ্লাইটে ঢাকা থেকে তুরস্ক হয়ে মরক্কোর মারাক্কেশ যাচ্ছিলেন, যেখানে তিনি OIC ইয়ুথ ক্যাপিটাল ২০২৫ (OIC Youth Capital 2025) অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিতে যাচ্ছেন।

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ (Group Captain SM Ragib Samad) জানান, ‘‘বোর্ডিংয়ের আগে স্ক্রিনিংয়ে তার ব্যাগে থাকা ছোট পাউচে একটি অ্যামোনেশন ম্যাগাজিন পাওয়া যায়। উপদেষ্টা ভুলবশত ম্যাগাজিনটি সঙ্গে এনেছেন বলে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সঙ্গে থাকা প্রটোকল অফিসারের কাছে সেটি দিয়ে দেন।’’

আইন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO), বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAB), শাহজালাল বিমানবন্দর এবং আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা IATA-এর নিয়ম অনুযায়ী, কেবিন ব্যাগেজে গুলি বা ম্যাগাজিন বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে নিরাপত্তা ও ঘোষণা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সঠিকভাবে প্যাক করা হলে চেক-ইন লাগেজে এসব বহনের সুযোগ রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য যে, আসিফ মাহমুদের ব্যাগে গুলি পাওয়া গেলেও তার সঙ্গে কোনো অস্ত্র ছিল না। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, একজন ভিআইপি উপদেষ্টার ব্যক্তিগত ব্যাগে আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন থাকার যৌক্তিকতা কী? সাধারণত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী তার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অস্ত্র বহন করে থাকেন। তাহলে ব্যক্তিগত ব্যাগে গুলি কেন?

আরো উদ্বেগের বিষয় হলো, ভিআইপি গেট দিয়ে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা চেকিংয়ে এটি ধরা না পড়া, যা কি না দায়িত্বে নিযুক্ত অপারেটরের গাফিলতির ইঙ্গিত দেয়। সৌভাগ্যবশত, বিমানে উঠার আগমুহূর্তে চূড়ান্ত স্ক্রিনিংয়ে ম্যাগাজিনটি শনাক্ত হয় এবং নিরাপদে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু এটি যদি বিমানে ওঠার পর ধরা পড়ত?

আরেকটি বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এ ঘটনাকে ঘিরে গণমাধ্যমের আচরণ। শুরুতে কিছু সংবাদমাধ্যমে এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই তা গায়েব হয়ে যায়। এই আচরণে দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা।

আসিফের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হয়েছে কিনা, কিংবা তার কাছে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল কি না—এসব প্রশ্ন এখনও অজানা। সাধারণ যাত্রীদের বেলায় এমন ঘটনায় তৎক্ষণাৎ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, কিন্তু একজন উপদেষ্টার ক্ষেত্রেও কি তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?

ঘটনাটি শুধু নিরাপত্তা বা আইন ভঙ্গের বিষয় নয়, এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রের ভিআইপি সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রতিচ্ছবি। এ ধরনের ঘটনা যদি যথাযথ তদন্ত ও গণজবাবদিহির আওতায় না আসে, তাহলে ভবিষ্যতে একই রকম বা আরও বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *