গুমের ঘটনায় জড়িত সেনাসদস্যদের বিচারে সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘ ও আইসিটির কর্মকর্তারা

গুমের সঙ্গে জড়িত সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান (Waqar Uz Zaman) ও সংশ্লিষ্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে। রোববার (২৯ জুন) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত এই বৈঠকটি ঢাকার সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত হয় বলে অন্তত দুটি সামরিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিশ্বস্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈঠকে অংশ নেন ঢাকাস্থ জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস (Gwyn Lewis), আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (ICT) প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম (Mohammad Tajul Islam), গুম সংক্রান্ত কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং কমিশনের চার সদস্য।

এ বৈঠকটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হলেও এর বিষয়ে সেনাবাহিনীর গণসংযোগ বিভাগ আইএসপিআর (ISPR), জাতিসংঘের অফিস, গুম কমিশন কিংবা আইসিটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও কেউই কোনো মন্তব্য করেননি।

আইসিটির প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলামকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে আইসিটির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর গাজী তামিম লেখেন, “চিফ প্রসিকিউটর স্যার সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকায় আজ আবু সাইদ মামলার ফরমাল চার্জ জমা দেওয়া হচ্ছে না।” তার এই বক্তব্যের সূত্র ধরে ধারণা করা হচ্ছে যে, তিনি তখনই সেনানিবাসে ওই বৈঠকে অংশ নিচ্ছিলেন।

গুম সংক্রান্ত কমিশনের এক সদস্য বৈঠকের বিষয়ে সরাসরি কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানালেও ইঙ্গিত দেন, “যথাসময়ে গণমাধ্যম সবকিছু জানতে পারবে।”

পটভূমি হিসেবে উল্লেখযোগ্য যে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গুম সংক্রান্ত কমিশন গঠন করে। এই কমিশন ইতোমধ্যে কয়েকটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে এবং দেশের বিভিন্ন সময় আলোচিত হওয়া গুমের ঘটনা নিয়ে তদন্তে নেমেছে। তাদের সংগ্রহে এখন পর্যন্ত অন্তত ১,৮০০ ভুক্তভোগীর তথ্য রয়েছে, যেগুলোর যাচাই-বাছাই চলছে।

এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা গুমের বিচার শুরু করে দিতে চাই। আর সে লক্ষ্যে যা যা প্রয়োজন তা করা হবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকটি শুধু একটি প্রক্রিয়াগত পদক্ষেপ নয়, বরং একটি রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বার্তা, যে বাংলাদেশ এখন অতীতের গোপনীয়তা থেকে বেরিয়ে এসে গুম ও নিখোঁজের বিচার নিয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি চায়। তবে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে পরবর্তী আইনি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ওপর।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *