“এই আন্দোলন শুধু ক্ষমতা বদলের জন্য নয়, একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য”—গাইবান্ধায় আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে এমনই স্পষ্ট বার্তা দিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam)। মঙ্গলবার (১ জুলাই) গাইবান্ধা শহরের পৌর শহীদ মিনার চত্বরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেয়নি, জনগণ কোনো গণ-অভ্যুত্থান করেনি। আমরা লুটপাটমুক্ত, বৈষম্যহীন নতুন রাষ্ট্র চাই।”
নাহিদ বলেন, “চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, দখলদারিত্বের রাজনীতির অবসান ঘটাতে হবে। ইনশাআল্লাহ, আমরা যারা নতুন দেশ গড়ার ডাক দিয়েছি, সেই দেশ গড়ে আবার ঘরে ফিরব।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই গণহত্যাসহ গত ১৬ বছরে যত অপরাধ হয়েছে, তার বিচার এ দেশের মাটিতেই করতে হবে। খুনি হাসিনা ও তার স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কার করে নির্বাচনের পথে যেতে হবে।”
গণআন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, “২০২৪ সালের এই দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শুরু হয়েছিল এই গণ-অভ্যুত্থান। খুনি হাসিনার সরকার ছাত্র ও জনগণের ওপর গুলি চালায়, নির্যাতন চালায়। এর জবাবে ছাত্র, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ রাজপথে এক দফা দাবিতে নেমে আসে।”
তার ভাষায়, “এই আন্দোলনে হাজারো মানুষ শহীদ হয়েছে, হাজার হাজার আহত হয়েছেন। শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। আমরা যেন প্রতিবাদের পথ থেকে না সরে যাই।”
নাহিদ আরও বলেন, “ভয়ের সংস্কৃতি ২০২৪ সালে ধসে পড়েছে। আমরা আবারও প্রয়োজনে রক্ত দেব, কিন্তু নতুন বাংলাদেশ থেকে পিছু হটব না।”
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের কর্মসূচিটি শুরু হয় রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে। এরপর গাইবান্ধায় পদযাত্রার অংশ হিসেবে আয়োজন হয় এই সমাবেশের।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ফিহাদুর রহমান।
নাহিদ ইসলামের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট ও প্রতিবাদী—রাজনীতি হবে পরিবর্তনের, প্রতিশোধের নয়। নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতের জন্যই এই আন্দোলন। “শহীদদের রক্তের পথেই এগোতে হবে”—এই বার্তাই ছিল পুরো বক্তব্যের মূল সুর।