“প্রতিটি ইস্যুতে ঐক্যমত জরুরি নয়, কিন্তু জাতীয় ইস্যুতে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যমত থাকা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য” – তারেক রহমান

তারেক রহমান (Tarique Rahman) বলেছেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের শরিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বিএনপি (BNP) ৩১ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে যদি জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয়, তাহলে একটি জাতীয় সরকার গঠন করে উন্নয়নমূলক প্রতিটি পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “একটি দুর্নীতিমুক্ত, নিরাপদ, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।” তারেক রহমান জানান, রাজপথে গড়ে ওঠা ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যই জাতীয় ঐক্যের প্রমাণ। ৫ আগস্টের ঘটনাকে তিনি সেই ঐক্যের “জ্বলন্ত উদাহরণ” হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “প্রতিটি ইস্যুতে ঐক্যমত জরুরি নয়, কিন্তু জাতীয় ইস্যুতে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যমত থাকা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।” তারেক রহমান হুঁশিয়ারি দেন, আর কোনো অপশক্তি যেন বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার দুঃসাহস না দেখায়। ফ্যাসিবাদী ও পলাতক অপশক্তির পুনর্বাসনের চেষ্টা সম্পর্কে সতর্ক করে দেন তিনি।

বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করে তারেক রহমান বলেন, “আমরা এমন একটি রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যেখানে জনগণই হবে সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক।” স্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার একমাত্র জনগণের হাতে থাকবে, এবং সেই প্রতিনিধিরাই জনগণের মুখাপেক্ষী হবেন—এমনটিই বিএনপির লক্ষ্য।

তারেক রহমান আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।” তিনি জানান, এই সরকার রাষ্ট্র সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে এবং ভবিষ্যতের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকেও এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একটি ইস্যুর সঙ্গে আরেকটি ইস্যুকে শর্ত হিসেবে জুড়ে না দিলে গণতন্ত্রের জন্য সেটি অধিকতর উপযোগী হবে।” তারেক রহমান জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে এবং তিনি বিশ্বাস করেন, সবাই দেশের স্বার্থে সর্বোত্তম প্রস্তাবই দিয়েছেন।

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিশ্বে এই ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকলেও বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটি এখন উপযোগী কিনা তা পুনর্বিবেচনার দরকার আছে।” তার আশঙ্কা, এই ব্যবস্থা দেশে একতা ভেঙে বিভাজন এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

তারেক রহমান সরাসরি প্রশ্ন রাখেন, “সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের আড়ালে কি আমরা নিজের অজান্তেই ফ্যাসিস্ট অপশক্তির পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিচ্ছি না?” তিনি মনে করেন, ইস্যুর পর ইস্যু সামনে আনলে ষড়যন্ত্রকারীরা পুনরায় সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাবে।

তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিদিনের জনগণের সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না, কারণ তাদের কাছে রাজনৈতিক দলের মতো সংযোগের মাধ্যম নেই।” সেই কারণে সংস্কার ইস্যুতে সরকারকে অতিমাত্রায় ব্যস্ত না রেখে, জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।

সবশেষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “চোখ হারানো যোদ্ধাদের অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বাংলাদেশকে দেখুন, আহতদের আর্তনাদে কান দিন, শহীদদের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলুন।” তিনি আহ্বান জানান, “যার যার শর্তের তালিকা না বাড়িয়ে একত্রিত হই একটি মানবিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *