‘জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা একবারও আমাদের খোঁজ নেয়নি’—এই অভিযোগের সুরে গলা বেঁধেছেন শহীদ আবদুল্লাহ বিন জাহিদ (Abdullah Bin Zahid)-এর শোকাহত মা ফাতেমা তুজ জোহরা (Fatema Tuz Zohra)। মঙ্গলবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বিএনপির এক আলোচনা সভায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।
‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪—জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফাতেমা বলেন, “আমার দুই ছেলের বড়জন আবদুল্লাহ। ৫ আগস্ট তিনি শহীদ হন। আর ছোটজন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে এখন হাসপাতালে। এর মধ্যে গত ১৮ মে আমার স্বামী ব্রেইন স্ট্রোকে মারা যান।” এসব ঘটনার বর্ণনায় উপস্থিত জনতার মধ্যে আবেগের সঞ্চার হয়।
তিনি বলেন, “আমরা বিএনপির পরিবার বলেই এই দুঃসময়ে কিছুটা সাহস পেয়েছি। ছোট ছেলের চিকিৎসার খরচও বিএনপিই বহন করছে। কিন্তু যাদের রক্তের বিনিময়ে ক্ষমতা মিলেছে, সেই অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা উপদেষ্টারা একবারও আমাদের খবর নেয়নি। এমনকি সারজিস-হাসনাতদের শতবার ফোন করলেও তারা ফোন ধরেন না।”
বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, “আগামী শুক্রবার ছোট ছেলের আরেকটি অপারেশন। ও যেন বেঁচে থাকে, শেষ অবলম্বনটুকু যেন হারিয়ে না যায়, এটাই এখন আমার একমাত্র চাওয়া। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।”
অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)। প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়াল বক্তব্য দেন দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)। সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী (Ruhul Kabir Rizvi)।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) ছিলেন বিশেষ অতিথি। এছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মির্জা আব্বাস (Mirza Abbas), ড. আবদুল মঈন খান (Abdul Moyeen Khan), নজরুল ইসলাম খান (Nazrul Islam Khan), আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khasru Mahmud Chowdhury), সালাহউদ্দিন আহমেদ (Salahuddin Ahmed) ও জাহিদ হোসেন (Zahid Hossain)।
দলীয় সূত্র জানায়, আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারের জন্য ‘বিশেষ সুবিধা’র পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির ভবিষ্যৎ সরকার কাঠামোতে। এদিন তাদের জন্য আলাদা আসনের ব্যবস্থাও ছিল।
ফাতেমা তুজ জোহরার কণ্ঠে উঠে এসেছে সেই অসহায়ত্ব, যেখানে একজন মা সন্তান হারিয়ে বিচারের আশায় তাকিয়ে থাকেন। অথচ যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের কাছে পৌঁছানোও যেন সম্ভব হচ্ছে না।