‘জুলাই আমাদের গর্বের প্রতীক, অনুতাপের নয়’—সজীব ওয়াজেদের বক্তব্যকে তীব্রভাবে খণ্ডন করলেন সাংবাদিক জুলকারনাইন

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা (Al Jazeera)-র অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের মঙ্গলবার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে এক তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে। জয়ের ভাষ্যে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলীকে ‘দাঙ্গা’ বলার তীব্র বিরোধিতা করে সায়ের বলেন—”আমরা একে দাঙ্গা নয়, প্রতিরোধ বলি।”

নিজের পোস্টে সায়ের বলেন, “স্বৈরশাসকের পুত্র প্রবাসে বসে আমাদের শেখান কিভাবে গণতন্ত্র রক্ষা করতে হয়, জনগণের পাশে দাঁড়াতে হয়। অথচ তিনি সেই জুলাইকে ঘৃণা করেন, যখন দেশের মানুষ সাহসিকতার সঙ্গে স্বৈরাচারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল।”

সায়ের অভিযোগ করেন, জয়ের বক্তব্য শুধু ইতিহাস বিকৃতি নয়, বরং একটি জাতির সমষ্টিগত স্মৃতি ধ্বংসের পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। তার কথায়, “যেটিকে জয় বলছেন ‘সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়’, সেটিই ছিল বাংলাদেশের মানুষের সাহস, মর্যাদা আর স্বৈরাচারবিরোধী দীপ্ত লড়াইয়ের অধ্যায়।”

সায়ের দাবি করেন, ওই গণ-আন্দোলনে দেশের ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়েছিল, অথচ সেই অভ্যুত্থানকে ‘দাঙ্গা’ বলে সম্বোধন করাটা ইতিহাসের নিষ্ঠুর অপমান। “সেই আন্দোলনে ১৪০০’র বেশি মানুষ খুন হয়েছিলেন প্রকাশ্যে। অনেকে আজও দৃষ্টিহীন, কারও হাত নেই, কারও পা নেই,” বলেন তিনি।

এই প্রেক্ষিতে সজীব ওয়াজেদ জয়কে উদ্দেশ্য করে জুলকারনাইন বলেন, “আপনি এখন দাঁড়িয়ে সহানুভূতির গল্প বলেন, ক্ষমার কথা বলেন। কিন্তু কোন প্যারালাল দুনিয়ায় বাস করছেন আপনি? এটি ‘একতাবদ্ধ’ করার কোনো প্রয়াস নয়—এটি ছলনা।”

সায়েরের অভিযোগ, জয় গণপ্রতিরোধকে ‘ভুল’ প্রতিক্রিয়া বলে চালিয়ে দিয়ে বিরোধীদের ‘বিদেশি অর্থায়ন’ ও ‘চরমপন্থা’র এজেন্ডা হিসেবে তুলে ধরছেন। তিনি লেখেন, “এই রকম ভাষা আমরা বহুবার শুনেছি—স্বৈরাচারীদের মুখে, ফ্যাসিবাদীদের মুখে।”

আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সায়ের বলেন, “এটি সেই দল, যারা একের পর এক তিনটি কারচুপির নির্বাচন করেছে। পাকিস্তান পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করেছিল, অথচ আজকের আওয়ামী লীগ ল্যান্ডস্লাইড জয় পাওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও জনগণের ভোটে ভরসা রাখতে পারেনি। গত ১৬ বছরে তারা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, বিরোধীদের গুম করেছে, মিডিয়াকে স্তব্ধ করেছে এবং ‘আয়নাঘর’ নামে একটি গোপন নির্যাতনকেন্দ্র চালিয়েছে—যা এক ধরনের গোপন গুয়ানতানামো বে (Guantanamo Bay) হয়ে উঠেছিল।”

তিনি আরও বলেন, “জুলাই আমাদের কাছে শুধু একটি সময় নয়—এটি আমাদের উপলব্ধির শ্রেষ্ঠ সময়। জয় যদি বলেন এটি ছিল দাঙ্গা, আমরা বলব এটি ছিল প্রতিরোধ। কারণ মানুষ সেই মাসে নিরস্ত্র হয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছিল, সত্য উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করেছিল।”

জুলকারনাইনের কথায়, এখন আর নতুন উপলব্ধির দরকার নেই, দরকার বিচার—“যেন আর কোনো দিন কেউ এভাবে নিজের জনগণের ওপরে স্ট্রিম রোলার চালানোর সাহস না পায়।”

তার বক্তব্যের শেষ লাইনটি যেন গোটা বিবৃতির সারসংক্ষেপ: “জুলাই আমাদের গর্বের প্রতীক—অনুতাপের নয়, বরং বিদ্রোহের।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *