চট্টগ্রামের পটিয়া থানা (Patiya Police Station)–র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরকে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (Anti-Discrimination Student Movement) ও জাতীয় নাগরিক কমিটি (National Citizens’ Committee, NCP)-র টানা আন্দোলনের মুখে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নেয়। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম (Saiful Islam) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পটিয়া থানার ওসিকে রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এই প্রত্যাহার সিদ্ধান্ত আসে দিনের শুরু থেকেই টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকায় অবরোধ চালায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। দীর্ঘ নয় ঘণ্টার এই অবরোধে দুই পাশে যানজটের ভয়াবহতা দেখা দেয়, দুর্ভোগে পড়েন হাজারো যাত্রী।
অন্যদিকে, একই দাবিতে চট্টগ্রাম নগরের জাকির হোসেন সড়কে ডিআইজি কার্যালয়ের সামনেও বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অবরোধে অংশ নেয় এনসিপির নেতা-কর্মীরা। মূল দাবি ছিল পটিয়া থানার ওসিকে অপসারণ ও শাস্তি।
তবে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে একদিন আগের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পটিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে ছাত্রলীগের এক কর্মী দীপঙ্কর দে (২৯)–কে আটক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। তাঁকে থানায় নেওয়া হলেও তাঁর নামে মামলা না থাকায় পুলিশ গ্রেপ্তার করতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পুলিশ দীপঙ্করকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, দীপঙ্কর নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ মামলা না নিয়ে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে। তাঁদের দাবি, থানায় উপস্থিত হয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলেও পুলিশ তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং লাঠিচার্জ করে, এতে অন্তত কয়েকজন আহত হন।
অন্যদিকে পুলিশের ব্যাখ্যা, আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে দীপঙ্করকে থানায় এনে মারধর করেন এবং থানার ভেতরেই এক ধরনের ‘মব’ পরিস্থিতি তৈরি করেন। পুলিশ বলছে, আইনগত সীমার মধ্যে থেকেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
সবশেষে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওসি নাজমুন নূরের প্রত্যাহার আন্দোলনকারীদের একধরনের জয় হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। তবে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনগুলোর সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে কিনা—সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।