২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন—এই ছয় মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে অবনতির দিকে গেছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (Human Rights Support Society – HRSS)। সংস্থাটির ষান্মাসিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজনৈতিক সহিংসতা, গণপিটুনি, নারী ও শিশু নির্যাতন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, সাংবাদিকদের উপর দমন-পীড়ন এবং সামাজিক অপরাধের পরিসংখ্যানে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা:
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়কালে দেশে ৫২৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ৭৯ জন নিহত ও ৪১২৪ জন আহত হয়েছেন। এসব সহিংসতার মূল কারণ হিসেবে আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধ, দলীয় কোন্দল, চাঁদাবাজি ও সম্পত্তি দখলকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশ্লেষণে উঠে আসে, বিএনপি (BNP) এর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৩০২টি সংঘর্ষে ৪৬ জন নিহত ও ২৮৩৪ জন আহত হন। এছাড়া বিএনপি-আওয়ামী লীগ (Awami League) সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত ও ৫০২ জন আহত হন। বিএনপি-জামায়াত (Jamaat-e-Islami) সংঘর্ষে নিহত ২ ও আহত ২১৬ জন, বিএনপি-এনসিপি সংঘর্ষে ৭৯ জন আহত এবং আওয়ামী লীগ-এনসিপি সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ৫৪ জন আহত হয়েছেন।
সাংবাদিক নির্যাতন:
এই সময়কালে সাংবাদিকদের উপর হামলা, হুমকি ও মামলার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি-জুন সময়ে ১৫২টি ঘটনায় ২৫৭ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হন। তাদের মধ্যে ১১১ জন আহত, ২০ জন লাঞ্ছিত, ৩৪ জন হুমকির মুখে এবং ১০ জন গ্রেপ্তার হন। এছাড়া ২২টি মামলায় ৯২ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়। মার্চ মাসে রাজধানীতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে একজন নারী সাংবাদিক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন।
গণপিটুনি ও সামাজিক অপরাধ:
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তত ১৪১টি গণপিটুনির ঘটনায় ৬৭ জন নিহত ও ১১৯ জন আহত হন। পাশাপাশি চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও খুনের মতো অপরাধ বাড়তে দেখা গেছে, যা জনমনে চরম আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে।
সংখ্যালঘু নির্যাতন ও হামলা:
প্রথম ছয় মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অন্তত ১০টি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৪ জন আহত, ১টি মন্দির, ১১টি প্রতিমা এবং ১৮টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংখ্যালঘুদের জমি দখলের দুটি ঘটনাও চিহ্নিত করা হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র:
এইচআরএসএস জানিয়েছে, ছয় মাসে ১০৪২ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৭৬ জন, যাদের ৬০ শতাংশই শিশু। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার ১১০ জন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৪ জনকে; আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন। যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ২৫৩ জন, যাদের ১৪৩ জন শিশু।
মানবাধিকার রক্ষায় করণীয়:
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক এবং নাগরিকদের সাথে কার্যকর সংলাপের মাধ্যমে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন জরুরি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা না গেলে সামগ্রিকভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে।