জাপায় নতুন মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ভাঙনের মুখে জাপা

জাতীয় পার্টির (Jatiya Party) অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের মধ্যেই বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের (GM Quader)। সোমবার (৭ জুলাই) তিনি দলীয় মহাসচিব পদ থেকে মুজিবুল হক চুন্নুকে সরিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী (Shamim Haider Patwary)-কে নতুন মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

জি এম কাদেরের প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চুন্নুকে বাদ দিয়ে তরুণ নেতৃত্বে আস্থা রাখার এই সিদ্ধান্তকে জাতীয় পার্টির ভেতরে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত বলেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

কাউন্সিল ঘিরে বিভক্তি ও স্থগিত সম্মেলন

২৮ জুন জাতীয় পার্টির জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন জি এম কাদের। তবে তার আগেই দলের ভেতর একাংশ নতুন নেতৃত্ব গঠনের তৎপরতা শুরু করে। সূত্র জানায়, সেই সম্মেলনে পার্টির চেয়ারম্যান পদে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (Anisul Islam Mahmud) ও মহাসচিব পদে রুহুল আমিন হাওলাদার (Raushan Amin Howlader) এগিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন বর্তমান মহাসচিব চুন্নুও।

এই পরিস্থিতিতে সম্মেলনের ভেন্যু ঘিরে জটিলতার অজুহাতে ২৮ জুনের জাতীয় সম্মেলন স্থগিত করে দেন জি এম কাদের। তবে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের অনুসারীরা তখনো ওই তারিখে সম্মেলন করতে অনড় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তারাও পিছু হটে এবং চেয়ারম্যানকে দ্রুত কাউন্সিল করার আলটিমেটাম দেন। না হলে বিকল্প সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।

এই টানাপড়েনের মধ্যেই হঠাৎ আজ জি এম কাদের নতুন মহাসচিব নিয়োগের ঘোষণা দেন। যা দলের অভ্যন্তরে একপক্ষকে শক্তি দেওয়ার কৌশল বলেই মনে করছেন অনেক জাপা নেতা।

পুরনো ইতিহাস, নতুন ভাঙনের শঙ্কা

জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি নতুন কিছু নয়। ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর প্রথম বড় ভাঙন ঘটে। এরপর ১৯৯৭ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার, ১৯৯৮ সালে কাজী জাফর ও শাহ মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে তৃতীয়বার, ২০০১ সালে নাজিউর রহমানের মাধ্যমে চতুর্থবার এবং ২০১৩ সালের বিশেষ কাউন্সিলে পঞ্চমবার দল ভাঙনের মুখে পড়ে।

২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল তার স্ত্রী রওশন এরশাদ (Raushan Ershad)-এর নেতৃত্বে দল থেকে একাংশ পৃথক হয়ে যায়।

দলীয় নেতাদের মতে, এবার যদি সম্মেলন নিয়ে গড়িমসি চলতেই থাকে, তবে জাপা সপ্তমবারের মতো বিভক্তির মুখে পড়বে। আর সেই সংকট মোকাবেলায় জি এম কাদেরের এই চমকপ্রদ সিদ্ধান্ত হয়তো এক পক্ষকে শক্ত করলেও, ভিন্নমতের নেতাদের আরও দূরে সরিয়ে দেবে বলেই ধারণা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *