মাদকবিরোধী অভিযানে ‘লুট’– বরখাস্ত হলেন ডিবি হারুনের ছোট ভাই জিয়াউর

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে নগদ প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা লুটের অভিযোগে জেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ (Harun-or-Rashid)–এর ভাই এবং জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান। ঘটনায় আরও দুই কর্মকর্তা–পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম ও সহকারী উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ১০টার দিকে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন (Abul Hossain) বরখাস্তের তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগেই সোমবার রাতে ওই তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

সূত্র জানায়, জিয়াউর রহমান গত ৫ আগস্ট টাঙ্গাইল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে যোগদান করেন। তিনি পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের ছোট ভাই হওয়ায় বিষয়টি আরও আলোচনায় উঠে এসেছে।

অভিযান ও লুট: ভুক্তভোগীর বর্ণনায় চাঞ্চল্য

ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ভূঞাপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সালেহা বেগম। তিনি বলেন, গত ১৮ জুন সকালে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে তার বাড়িতে অভিযান চালায় অধিদপ্তরের একটি দল। কোনো মাদক না পেয়ে প্রথমে ২০ হাজার টাকা দাবি করে কর্মকর্তারা। তিনি ১০ হাজার টাকা হাতে দেন, বাকি টাকা মোবাইল ফোনে পাঠাতে বলা হয়।

পরবর্তী সময়ে একই দল আবার তার বাড়িতে ফিরে আসে এবং আসবাবপত্র তছনছ করে। নাটকীয়ভাবে অভিযান চালিয়ে ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের দাবি করা হয়। এর পরেই ঘরের আলমারির তালা ভেঙে ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা এবং ছেলের ঘর থেকে আরও এক লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যায় অভিযানে থাকা সদস্যরা।

ভয়ে ভীত সালেহা বেগম জানান, তাকে এবং তার পুত্রবধূকে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হয় এবং তার জবানবন্দির ভিডিও রেকর্ডও করা হয়।

মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই, ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগী

এই অভিযানের মূলহোতা ছিলেন সহকারী উপ-পরিদর্শক শামীম আল আজাদ। তবে তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো দৃশ্যমান শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সালেহা বেগম। তিনি বলেন, “টাকার জন্য আমাকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে শামীম। ওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমি ভীষণ হতাশ। শুধু সাময়িক বরখাস্তে সন্তুষ্ট নই—আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই এবং আমার লুট হওয়া টাকাগুলো ফেরত চাই।”

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শামীমকে আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় সংযুক্ত করা হলেও তিনি এখনো যোগদান করেননি। এ কারণে মঙ্গলবার উপ-পরিচালক আবুল হোসেন তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগ ও প্রশাসনের নড়াচড়া

সালেহা বেগম অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় থানায়। অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা আসে, আর এরপরই শুরু হয় পদক্ষেপ।

সংবাদমাধ্যমে ঘটনার সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়। ‘মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে অর্থ লুটের অভিযোগ, তদন্তে কমিটি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের একদিন পরই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

উপ-পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, “অভিযানের নামে কেউ যদি আইনবহির্ভূত কিছু করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *