গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘সরকারি ঘর ও পানির পাম্প দেওয়ার’ প্রলোভনে একাধিক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন এক ব্যক্তি, এমন অভিযোগে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি মো. রাকিব চৌধুরী নিজেকে একটি সরকারি প্রকল্পের ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন। পরে প্রতারিতদের অভিযোগে বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে তিনি স্বীকার করেন—“ভুল হয়েছে, টাকা ফেরত দেব।”
কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আলাউদ্দিন মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তার আগে সোমবার দুপুরে চারজন ভুক্তভোগী থানায় যৌথভাবে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তরা হলেন—রাকিব চৌধুরী (২৬) এবং তার বাবা আলাউদ্দিন চৌধুরী (৬৫)।
অভিযোগকারী ভুক্তভোগীরা হলেন—জাঙ্গালিয়া এলাকার সাফির উদ্দিন শেখ (৬০), মো. সারোয়ার (৩০), মোসা. সালেহা বেগম (৩৫) এবং বক্তারপুর ইউনিয়নের ফুলদী গ্রামের মো. হোসেন মিয়া (৩৬)। তাদের ভাষ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে রাকিব ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে সরকারি ঘর ও পানির পাম্প পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে একাধিক ধাপে মোট ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা নেন। কিন্তু সময় পার হলেও কেউই প্রতিশ্রুত সুবিধা পাননি।
এদের মধ্যে সাফির উদ্দিন ৪১ হাজার টাকা, সারোয়ার ১১ হাজার, আর সালেহা ও হোসেন মিয়া ৪৫ হাজার টাকা করে দেন। প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ পেলে তারা টাকা ফেরত চাইলে রাকিব উল্টো ভয়ভীতি ও মিথ্যা মামলার হুমকি দেন।
স্থানীয় সূত্র বলছে, এ ধরনের প্রতারণা রাকিব আগেও করেছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে একই কৌশলে প্রায় ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও দাবি করা হয়।
জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সৈয়দ আহমেদ কবির বুলবুল বলেন, “রাকিব অনেকের কাছ থেকেই এভাবে টাকা নিয়েছে। এখন সে পলাতক। অভিযোগের পর পুলিশ তার বাড়িতে গেলেও তাকে পায়নি, পরে ফোনে কথা হয়।”
অভিযুক্ত রাকিবকে মোবাইল ফোনে পাওয়া গেলে তিনি বলেন, “আমি ভুল করেছি। ঘর ও পানির পাম্প দেওয়ার কথা বলে আটজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। কাজ হয়নি। টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে এসব বিষয়ে আমার বাবা কিছুই জানেন না।”
তবে রাকিবের দাবি করা ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ের সঙ্গে সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুর জেলা কমিটি। সংগঠনের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, “রাকিবের সঙ্গে আমাদের সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। তার পরিচয়টিই ভিত্তিহীন।”
কালীগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই মো. হাবীবুর রহমান জানান, অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্ত রাকিবের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পাওয়ায় ফোনে যোগাযোগ করা হয়। রাকিব টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে দ্রুত ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাকে সময় দেওয়া হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ ফেরত না পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, “বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। অভিযোগের সত্যতা মিললে প্রতারকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
স্থানীয় পর্যায়ে সাধারণ মানুষের এমন প্রতারণার শিকার হওয়ায় ক্ষোভের পাশাপাশি প্রশাসনের সক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এখন দেখার বিষয়—ঘর ও পানির পাম্পের আশায় কষ্টার্জিত টাকা দেওয়া মানুষগুলো তাদের অর্থ ফেরত পান কিনা, আর প্রতারকরা কীভাবে আইনের আওতায় আসে।