নারায়ণগঞ্জে প্রথমবারের মতো নির্মিত হলো জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নজর কাড়লো এক অনন্য দৃশ্য—উপদেষ্টারা নিজেরা মেঝেতে বসে শ্রদ্ধার আসনে বসালেন শহীদদের মা-বাবা ও স্বজনদের।
সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেলে নগরীর হাজীগঞ্জ এলাকায় এই স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য চেয়ারে বসার ব্যবস্থা করা হলেও উপদেষ্টারা নিজেরাই মঞ্চের মেঝেতে বসে শ্রদ্ধা জানান।
এদিন স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন শেষে বক্তব্যে ড. আসিফ নজরুল (Asif Nazrul), আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই আন্দোলনে সংগঠিত গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। কোনো গাফিলতি হবে না। আমি বিশ্বাস করি, এই সরকারের মেয়াদেই বিচার সম্পন্ন হবে।”
শহীদ পরিবারের প্রতি সরাসরি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের হৃদয়ে যে ক্রন্দন, যে আর্তনাদ—সে আমরা বুঝি। ভাইদের চোখ উপড়ে নেওয়া হলো, অঙ্গহানি করা হলো, নির্মমভাবে হত্যা করা হলো… সেই জঘন্যতার বিচার হবেই। আমি তা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছি।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আদিলুর রহমান খান (Adilur Rahman Khan), শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় জুলাই শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি গণভবনকে একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাদুঘরে রূপান্তরিত করার কাজও এগোচ্ছে, যার উদ্বোধন হবে ৫ আগস্টের আগেই।
আদিলুর রহমান খান আরও বলেন, “আমরা শহীদদের কবরগুলো সংরক্ষণের জন্য কাজ করছি। সংগ্রামের ধারাটি আমরা শেষ করতে পারব না—এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি। আপনারা অগ্নিযুগের সন্তান, আপনারাই এগিয়ে নিয়ে যাবেন সেই সংগ্রাম।”
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (Syeda Rizwana Hasan), পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অনুষ্ঠানে বলেন, “জুলাই আন্দোলনে আমাদের ছাত্র ও জনগণ একত্রিত হয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। তাদের ত্যাগে আমরা একটি বৈষম্যমুক্ত, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি।”
তিনি জানান, “এই নারায়ণগঞ্জেই ৫৬ জন শহীদ হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ২১ জন ছিলেন নারায়ণগঞ্জের সন্তান। আজকের স্মৃতিস্তম্ভ তাদের প্রতি আমাদের ঋণস্বীকার।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (Zahidul Islam Mia), জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদারসহ জেলার বিশিষ্টজনেরা। শহীদ পরিবারকে কেন্দ্র করে পুরো আয়োজনটি গড়ে উঠলেও, উপদেষ্টাদের মেঝেতে বসে থাকা বার্তা দিয়েছে—এই শ্রদ্ধা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, এক গভীর আত্মিক স্বীকৃতি।