জুলকারনাইন সায়ের (Zulkarnain Sayer)—আল জাজিরা (Al Jazeera)-র অনুসন্ধানী সাংবাদিক—ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে এক ধরনের ধাঁধার মাধ্যমে এক নির্মম বাস্তবতার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কুমিল্লার মুরাদনগরে ঘটে যাওয়া নৃশংস মা-সন্তান হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি শিমুল বিল্লাহর সঙ্গে বসে আছেন আরেকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। ধাঁধার প্রশ্নে জুলকারনাইন লিখেছেন:
“একটি ধাঁধাঃ
গত ৪ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ‘মূল হোতা’ ও মামলার প্রধান আসামি আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহের সাথে বসা মাঝখানের ব্যক্তিটির নাম-পরিচয় কি?”
ছবিটি যে গোপনে তোলা, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কোণ এবং ভঙ্গি দেখে। সাংবাদিকের দাবি, এই প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রচ্ছায়ায়ই এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি মূল আসামিকে।

তিন খুন, ১২ দিন, কিন্তু এখনও অধরা শিমুল
গত ৪ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়ি গ্রামে এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটে। মাদক কারবার ও মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে রোকসানা বেগম রুবি, তাঁর মেয়ে জোনাকি আক্তার এবং ছেলে রাসেল মিয়াকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রুবির দুই মেয়ে—রিক্তা আক্তার ও রুমা আক্তার—আহত হন। রুমা এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পরদিনই, ৫ জুলাই, বাঙ্গরা বাজার থানায় রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২০–২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে জেলা ডিবি পুলিশ।
তবে ঘটনার ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার প্রধান আসামি, ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ (Shimul Billah) এখনো অধরা।
গোপন বৈঠকের ছবি ঘিরে সন্দেহ
ফেসবুকে জুলকারনাইন সায়েরের প্রকাশিত ছবিটি আরও বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মামলার প্রধান আসামি শিমুল বিল্লাহকে নিয়ে একান্ত বৈঠকে আছেন আরেক পরিচিত মুখ, যিনি সন্দেহভাজনদের একজন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা। তবে এখনো পর্যন্ত তার নাম পরিচয় বা এই বৈঠকের উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়।
এই প্রশ্ন উঠে এসেছে: একজন খুনের মামলার প্রধান আসামি কীভাবে একজন রাজনৈতিক উপদেষ্টার পরিবারের সদস্যের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসেন, আর পুলিশ তবুও তাকে ধরতে পারে না?
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবার
ঢাকা থেকে সমকালকে ফোনে রিক্তা জানান, “আমার মা ও ভাইবোন খুনের পর আহত বোন রুমার চিকিৎসার জন্য এখনো ঢাকায় আছি। ঘাতকরা ঘোষণা দিয়েছে, প্রয়োজনে ৫-১০ কোটি টাকা খরচ করে হলেও রুবির দুই মেয়ের লাশ ফেলা হবে। এখন প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকি। রাতে ঘুমাতে পারি না।”
তিনি আরও জানান, পুলিশ আমাদের বাড়ির প্রতিটি গেটে তালা লাগিয়ে রেখেছে নিরাপত্তার জন্য। তবে পুলিশ আর ক’দিনই বা নিরাপত্তা দেবে? তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “শিমুল চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করলে বাকিদের নামও বের হয়ে যাবে।”
মামলার অগ্রগতি কতদূর?
জেলা ডিবির ওসি মো. আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত আটজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে এখনও কোনো আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, এলাকায় পুলিশের টহল রয়েছে এবং পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। মামলার বাদী ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাসও দেন তিনি।
তবে জুলকারনাইন সায়েরের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আবারো প্রশ্ন উঠেছে—এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১২ দিনেও কেন ধরা পড়ছে না প্রধান আসামি? সত্যিই কি আইনের ঊর্ধ্বে কেউ?