সুনামগঞ্জে সরকারি সম্পদ ও প্রশাসনিক ক্ষমতার দলীয় অপব্যবহারের অভিযোগে ফের তোলপাড়। জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)–র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ। বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শংকর কুমার দাসকে নির্বাহী প্রকৌশলীর সরকারি গাড়িতে চড়তে দেখা যাওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সমালোচনার ঝড়।
ঘটনাটি ঘটে গতকাল বুধবার, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাতকের আলোচিত এই আ.লীগ নেতা সরকারি গাড়ি থেকে নেমে উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন এবং সেখানে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। সরকারি সম্পদের এমন প্রকাশ্য রাজনৈতিক ব্যবহারে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের বিস্তার ঘটে।
গাড়িটি ব্যবহার করতেন সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন। তবে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “আমরা তাকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়, একজন ব্যবসায়ী হিসেবে গাড়িতে নিয়েছি। এখানে দলীয় পরিচয় মুখ্য নয়।” তবে এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন অনেকেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘ব্যবসায়ী’ পরিচয়ের আড়ালে মূলত রাজনৈতিক পুনর্বাসনের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এলজিইডির সরকারি সম্পদকে। তারা বলছেন, দলীয় পরিচয় থাকলেই প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা মিলছে, অথচ অন্য দলের নেতাকর্মীরা রয়েছেন উপেক্ষিত।
দোয়ারাবাজারের একজন বাসিন্দা বলেন, “যদি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ দল হয়, তাহলে তাদের নেতারা নির্বিঘ্নে কিভাবে সরকারি গাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন? এটা তো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নগ্ন অপব্যবহার!”
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, শংকর কুমার দাস অতীতে ক্ষমতার সময়ে এলাকা জুড়ে দমন-পীড়ন, বিরোধী নেতাদের হয়রানি এবং ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে ভীতি প্রদর্শনের জন্য কুখ্যাত ছিলেন। বিশেষ করে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জুলাই বিপ্লব–এর পর দীর্ঘদিন আত্মগোপনেও ছিলেন তিনি।
ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দোয়ারাবাজার উপজেলা শাখার সদস্য সচিব সোহেল মিয়া। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসনামলে শংকর বাবু ঠিকাদারি ব্যবসার ছত্রছায়ায় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেছেন আন্দোলন দমন করতে। এখন আবার সরকারি গাড়িতে ঘুরছেন—এটা জনগণের সঙ্গে উপহাস ছাড়া কিছুই নয়।”
এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ নিজেও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ। তার কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে, অথচ বিরোধী দলের কেউ গেলে হয়রানি ও অবহেলার শিকার হন।