ড. ইউনূসের সঙ্গে সোহেল তাজ ও শারমিনের সাক্ষাৎ: রাজনীতিতে নতুন বার্তা?

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ (Tajuddin Ahmad)-এর সন্তান শারমিন আহমদসোহেল তাজ (Sajeeb Wazed) বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-এর সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।

এই সাক্ষাৎকারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ছবি শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, “আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে।” ছবিতে ড. ইউনূসের পাশে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে শারমিন আহমদ ও সোহেল তাজকে দেখা যায়।

তাজউদ্দীন পরিবারের এই সাক্ষাৎ এমন এক সময়ে হলো, যখন দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে। সদ্যসমাপ্ত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ (Awami League) ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে এবং দলটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। একইসঙ্গে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

সোহেল তাজ নবম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের হয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে তিনি পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন না করে পদত্যাগ করেন, যার পর থেকেই দলটির সঙ্গে তার দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে পরবর্তীতে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসাবে সংসদ সদস্য হন তার আরেক বোন রিমি।

অন্যদিকে শারমিন আহমদ যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী লেখক ও গবেষক। তিনি নিজেকে তাজউদ্দীনের রাজনৈতিক আদর্শের উত্তরসূরি মনে করেন এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি বরাবরই সমালোচনামূলক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তার দুটি আলোচিত বই— ‘তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা’ এবং ‘৩ নভেম্বর: জেল হত্যার পূর্বাপর’— দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্য হিসেবে বিবেচিত।

২০২৪ সালের শেষদিকে এক সাক্ষাৎকারে শারমিন বলেছিলেন, “আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।” তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন তোলে।

এদিকে সাক্ষাতের দিন দুপুরে সোহেল তাজ তার নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিস্ফোরক স্ট্যাটাসে দাবি করেন, “গতকাল গোপালগঞ্জে যে হামলা হয়েছে, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের (নাহিদ, সার্জিস, হাসনাত, জারা) নেতাদের হত্যার হীন প্রচেষ্টা। আমি অবাক হবো না যদি এর নির্দেশ ডেভিল রানী নিজেই দিয়ে থাকেন।”

তবে তার এই মন্তব্যের বিষয়ে এখনো অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা অন্য কোনো সংশ্লিষ্ট পক্ষের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এই সাক্ষাৎ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল, নাকি এর ভেতরে রয়েছে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার ইঙ্গিত—এ নিয়ে এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলে চলছে জোর আলোচনা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *