‘আমি জীবিত ও সম্পূর্ণ সুস্থ, আমাকে নিহত বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে ছাত্রলীগ’

গোপালগঞ্জ শহর গতকাল বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে হঠাৎই রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত এক সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় প্রাণ হারান অন্তত চারজন। এদের একজন বলে দাবি করা হয় ‘রমজান কাজী’ নামের এক যুবককে। কিন্তু কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে ছবি ছড়ানো হয়েছে, সেটি নিহত ব্যক্তির নয়—বরং সিরাজগঞ্জের যুবক জুলকার নাইম হৃদয় নামে এক তরুণের। যিনি এখনো জীবিত এবং সুস্থ। এই বিভ্রান্তিকর প্রচারকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) কামারখন্দ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি ও তার পরিবার।

হৃদয়, যিনি বৈষম্যবিরোধী ‘জুলাই আন্দোলনে’ অংশ নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন, দাবি করেন, “গোপালগঞ্জের সহিংসতায় নিহত বলা হচ্ছে যে ‘রমজান কাজী’, ছবিটি আসলে আমার। এটি ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে আমার আহত হওয়ার সময়কার ছবি। আমি এখনও বেঁচে আছি, সুস্থ আছি। কিন্তু এই ছবি ও পরিচয় ব্যবহার করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে আমি ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ কর্মী এবং গোপালগঞ্জে নিহত হয়েছি।”

তিনি বলেন, “এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও মানহানিকর। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। অথচ ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সদস্য রমজান কাজী’ নামে আমার পরিচয় ব্যবহার করে আমার চরিত্রহনন করা হচ্ছে।”

এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে গিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নিজের ‘মৃত্যুর খবর’ দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান হৃদয়। এ বিষয়ে হৃদয়ের বাবা আলী আক্কাস সরকার বলেন, “আমার ছেলে তো বাড়িতেই আছে, জীবিত ও সুস্থ। অথচ গোপালগঞ্জের সংঘর্ষে নিহতদের তালিকায় ওর নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওর ছবি পর্যন্ত ব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে হৃদয়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক, July আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য এবং শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, বিভ্রান্তিকর এ তথ্য ছড়ানোর জন্য দায়ী মূলত কিছু ছাত্রলীগকর্মী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া প্রো-পার্টি পেজ ও ব্যক্তিগত আইডি।

হৃদয় অনুরোধ জানান, “দ্রুত এই মিথ্যা তথ্য সংশোধন করা হোক। কোনো গণমাধ্যম যেন যাচাই-বাছাই ছাড়া এমন জীবনঘাতী বিভ্রান্তি না ছড়ায়। একজন জীবিত মানুষকে মেরে ফেলার এই অপচেষ্টা সংবাদিকতার ন্যূনতম নীতিমালারও পরিপন্থী।”

প্রসঙ্গত, যাকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, সেই জুলকার নাইম হৃদয় সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ধোপাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা এবং আলী আক্কাস সরকারের ছেলে। তিনি ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন এবং সেখানেই আহত হয়েছিলেন। সেই সময়কার একটি ভিডিও ও ছবি এখন অপব্যবহারের শিকার।

এই ঘটনায় গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। সত্য যাচাই না করে, একটি ভুল ছবি ও পরিচয় প্রচার করে কেবল একজন ব্যক্তির সম্মান নয়—তার পরিবারের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে ফেলেছে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *