‘৫০ হাজার টাকা দাও, আমি দেখছি’— অডিও ফাঁসে জামায়াত নেতা, চাপের মুখে তদন্ত

কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে এক ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে জামায়াতে ইসলামীর এক নেতার বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়ে পড়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে। অডিও ক্লিপে নিজেকে থানা পুলিশের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়ে মামলা থেকে বাঁচানোর আশ্বাস দিয়ে টাকা দাবি করতে শোনা যায় আনিসুর রহমান নামের ওই নেতা, যিনি জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন (Sramik Kallyan Federation)-এর রাজিবপুর উপজেলা শাখার সভাপতি।

অভিযোগকারী ব্যবসায়ী বাবু মিয়া জানান, ২০১৩ সালে জামায়াত অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলার ভয় দেখিয়ে তার কাছে অর্থ দাবি করেন আনিসুর রহমান। বাবু মিয়া বলেন, “তিনি নিজেকে থানার ওসির খুব ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে ভয় দেখান। বলেন, আমি যেন তাকে ৫০ হাজার টাকা দিই, তাহলে তিনি বিষয়টা দেখবেন।”

প্রকাশিত অডিওতে শোনা যায়, আনিসুর রহমান বলছেন, “বাবু শোনো, তোমার বিষয়ে আমাকে ফোন দিয়েছিল অফিসার। আমি বলেছি, ও আমার ছোট ভাই, বিষয়টা আমি দেখব। তুমি আমার সঙ্গে জরুরি দেখা করো… তোমার যদি একটা পশমের ক্ষতি হয়, আমি রাজিবপুরে দ্বিতীয় দিন মুখ দেখাব না।”

তিনি আরও বলেন, “তুমি আমার মোটরসাইকেলে ঘুরবা। পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই ইনশাআল্লাহ। তুমি ফ্রি থাকো। আলহামদুলিল্লাহ বলে দুই গ্লাস পানি খাও। তোমার ভাই আছে তোমার পাশে।”

বাবু মিয়া জানান, “আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। আমি দীর্ঘদিন রাজিবপুর বাজারে পার্টসের ব্যবসা করি। এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”

অভিযোগ অস্বীকার করে আনিসুর রহমান দাবি করেছেন, “আমি তার কাছে কোনো টাকা চাইনি। এটা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। যে অডিওটি প্রকাশ হয়েছে, সেটি এডিট করা।”

২০১৩ সালের মামলার প্রেক্ষাপট নিয়ে আনিসুর বলেন, “তখন সে মামলার আসামি হতে পারে না, কারণ ওই সময় তার বয়সই হয়নি। মামলা হয়েছে অনেক পরে।”

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল মতিন ফারুকী (Abdul Matin Faruqi) বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে অবগত আছি। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রাজিবপুর থানার নতুন অফিসার ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম (Shariful Islam) বলেন, “আমি থানায় নতুন যোগদান করেছি। আমার সময়ে এমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। যদি এমন কিছু প্রমাণিত হয়, অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই অডিও ফাঁস ও চাঁদা দাবির অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই এটিকে রাজনৈতিক চাপ ও প্রশাসনিক প্রভাব বিস্তারের একটি উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *