গোপালগঞ্জের ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত বিবৃতি দিলো আইএসপিআর

গোপালগঞ্জে বার বার মাইকে ঘোষণা দিয়েও হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে না পেরে সেনাবাহিনী ‘আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়’ বলে ব্যাখ্যা দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর।

জেলার সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন ‘স্বাভাবিক’ রয়েছে জানিয়ে ‘গুজব বা অপপ্রচারে’ বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

বৃহস্পতিবার ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গোপালগঞ্জ জেলায় একটি রাজনৈতিক দলের জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে আহ্বানকৃত জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে এলাকার একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা গত ১৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে সংঘবদ্ধভাবে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

“এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিক আহত হন। এছাড়াও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সরকারি যানবাহনে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।”

পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ ‘তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করে’ এবং প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় বলে আইএসপিআরের ভাষ্য।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “উক্ত রাজনৈতিক সংগঠনের সমাবেশ চলাকালীন মঞ্চে পুনরায় হামলা চালানো হয় এবং একই সাথে জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।

“এমতাবস্থায়, সেনাবাহিনী হামলাকারীদের মাইকে বারংবার ঘোষণা দিয়ে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা সেনাবাহিনীর উপর বিপুল সংখ্যক ককটেল ও ইট পাটকেল ছুড়ে হামলা করে এবং এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়।”

আইএসপিআর বলছে, পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে ‘বিশৃঙ্খলাকারীদের’ ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

“অতঃপর, সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশ সুপারের কার্যালয়, গোপালগঞ্জ এ আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গকে খুলনায় স্থানান্তর করা হয়। সর্বোপরি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পেশাদারত্ব ও ধৈর্যের সাথে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।”

কোন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কারা হামলা চালিয়েছিল, তা নাম উল্লেখ বলেনি আইএসপিআর। সংঘাতের মধ্যে হতাহতের কোনো তথ্যও সেখানে আসেনি।

জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ।

টানা ৫ ঘণ্টার ওই সংঘাতে নিহত হন অন্তত চারজন। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আটকা পড়া এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা পরে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে করে গোপালগঞ্জ ত্যাগ করেন।

দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম পরে অভিযোগ করেন, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা ‘সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ’ নিলে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারত না।

সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছিল। সেই সময় শেষে কারফিউ না তুলে তা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিরতি দিয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলবে।

আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলায় সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং প্রশাসন কর্তৃক জারিকৃত কারফিউ চলমান রয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব এবং প্রশাসনের অন্যান্য সংস্থাগুলো ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

“গতকাল সকাল হতে চলমান এই রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলায়, গোপালগঞ্জ জেলার জনসাধারণ অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে নিজেদের নিবৃত্ত রেখে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছেন। গুজব বা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে ধৈর্য ধারণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও জননিরাপত্তা রক্ষায় সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *