ভালো মানুষ তৈরি না হলে কোনো জাতি বা রাষ্ট্র টেকসই উন্নয়নের পথে এগোতে পারে না—এমন মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (General Waker-Uz-Zaman)। তিনি বলেন, “প্রথম শর্ত হলো ভালো মানুষ হওয়া। নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধ থাকলেই একজন প্রকৌশলী, চিকিৎসক বা অফিসার দেশের প্রকৃত উপকারে আসতে পারে।”
শনিবার মিরপুর সেনানিবাসে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) (Military Institute of Science and Technology – MIST)-তে আয়োজিত ‘মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড সায়েন্স’ বিষয়ক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে বলেন, “শুধু ভালো প্রকৌশলী হলেই হবে না, একজন সৎ ও শৃঙ্খলাবান মানুষ না হলে তিনি জাতির জন্য কার্যকর নন। আমরা অনেক ভালো পেশাদার তৈরি করছি, কিন্তু নৈতিকতা না থাকলে তারা দেশকে প্রকৃত অর্থে এগিয়ে নিতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “এই সম্মেলন একটি আন্তঃবিষয়ক সংলাপ ও প্রযুক্তি বিকাশের মঞ্চ হিসেবে কাজ করেছে। বাস্তব সমস্যা সমাধানে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির উৎসাহ জুগিয়েছে।” তিনি অংশগ্রহণকারী গবেষক, পেশাজীবী ও প্রতিনিধি দলগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “আপনাদের অংশগ্রহণ, আন্তরিকতা ও জ্ঞানচর্চা এই ফোরামকে অর্থবহ করে তুলেছে।”
উদীয়মান গবেষকদের উদ্দেশে সেনাপ্রধান বলেন, “সীমারেখা ভাঙুন, কৌতূহলী থাকুন এবং উদ্ভাবনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হোন। এই ধরনের সম্মেলন আপনারা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সোপানে পরিণত করতে পারেন।”
আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রুনেই, মিশর, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, জাপান, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর ও চীনের খ্যাতনামা গবেষক ও পেশাজীবীরা অংশ নেন।
তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এ সম্মেলনে যন্ত্রকৌশল, উৎপাদন প্রকৌশল, অ্যারোনটিক্যাল ও নেভাল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়াও প্রয়োগিক বিজ্ঞানের নানা শাখা যেমন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, মেকাট্রনিক্স, নবায়নযোগ্য শক্তি, তাপ প্রকৌশল, ডিজাইন ও উৎপাদন, অ্যারোডাইনামিক্স, হাইড্রোডাইনামিক্স, কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডাইনামিক্স, অ্যাভিওনিক্স ও মহাকাশ প্রযুক্তি নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা ও উদ্ভাবন তুলে ধরা হয়।
বক্তারা বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পারস্পরিক সহযোগিতা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে এগিয়ে চলার আহ্বান জানান।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়—শুধু প্রযুক্তি নয়, তার সঙ্গে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয়েই টেকসই ভবিষ্যৎ সম্ভব।