‘এনসিপির কেউ জিতবে না, তাই পিআর পদ্ধতির অজুহাতে নির্বাচন পেছাতে চায়’ — ইশরাক

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নির্বাচনী সাফল্য নিয়ে তীব্র সংশয় প্রকাশ করে দলটির বিরুদ্ধে নির্বাচনী চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন (Engineer Ishraque Hossain)। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে এনসিপির প্রার্থী বিজয়ী হতে পারে।” তাই তারা “পিআর পদ্ধতির” নামে আসন্ন নির্বাচন পেছাতে ষড়যন্ত্র করছে।

রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াবাজারে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব মন্তব্য করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)–এর বিরুদ্ধে কটূক্তির প্রতিবাদ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে এ সমাবেশ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। নয়াবাজার মোড় থেকে শুরু হয়ে এই মিছিল তাঁতীবাজার, গুলিস্তান ও পল্টন হয়ে নয়াপল্টনের বিএনপি কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।

ইশরাক হোসেন বলেন, “জুলাই শহীদদের আত্মা আজ কষ্ট পাচ্ছে। কারণ, শহীদরা কেউ ভাবেননি যে তাদের আত্মত্যাগ কারও ক্ষমতালোভের হাতিয়ার হবে।” তিনি স্পষ্ট ভাষায় এনসিপিকে শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণের জন্য দায়ী করে বলেন, “ব্যক্তির বাকস্বাধীনতা মানে এই নয় যে অন্যকে সামাজিকভাবে হেয় করা যাবে।” বিশেষ করে কক্সবাজারে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ সম্পর্কে এনসিপি নেতা নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী (Nasiruddin Patwari)–র বক্তব্যকে তিনি তীব্র ভাষায় নিন্দা করে বলেন, “তাঁকে ক্ষমা চাইতেই হবে, না হলে চকরিয়ার মতো সারা দেশে তারা অবাঞ্ছিত হয়ে পড়বে।”

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আক্রমণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “দেশে কিছু হলেই এনসিপি-জামায়াত বিএনপিকে দায়ী করে। অথচ তারাও জানে, অবাধ নির্বাচন হলে বিএনপিই জনগণের ভোটে জয়ী হবে।” নির্বাচন নিয়ে বারবার অযৌক্তিক দাবি তুলে তারা মূলত সময়ক্ষেপণ ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জুলাই আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আজ এনসিপি-জামায়াত জুলাই শহীদদের নিয়েও রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে। আমি জানতে চাই, এ আন্দোলনে তাদের কতজন শহীদ হয়েছে?” বিএনপি নেতা দাবি করেন, এই আন্দোলনের মূল সংগঠক ছিলেন তারেক রহমান এবং ছাত্রদল-যুবদলের নেতারা। অথচ এখন ক্ষমতার লোভে তারা অতীত ভুলে গিয়ে তারেক রহমানকে অপবাদ দিচ্ছে।

সম্প্রতি সংঘটিত সহিংসতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গোপালগঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় বিএনপির তিনজন নিহত হয়েছেন, কিন্তু তখন কোনো প্রতিবাদ বা রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। অথচ এনসিপির সমাবেশে পাঁচজন নিহত হলেই সবাই সরব হয়ে ওঠে। দায়ভার কে নেবে?”

তিনি আরও বলেন, কুমিল্লার মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার ভূমিকা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। একের পর এক খুনের ঘটনায় যখন বিএনপিকে দায়ী করা হয়, তখন কোনো যাচাই-বাছাই করা হয় না। আর যখন স্পষ্ট হয়ে যায় যে অন্য কোনো দলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তখন মিডিয়াও নীরব হয়ে যায়। তাঁর মতে, মুরাদনগরে এখন যে ধরনের নিপীড়ন চলছে, তা এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও দেখা যায়নি।

ইশরাক হোসেনের বক্তব্যে স্পষ্ট, বিএনপি একদিকে নিজের অবস্থান শক্ত করতে চায়, অন্যদিকে এনসিপি ও সরকারপন্থীদের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। নির্বাচনের মাঠকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলের রাজনীতিতে আবারও উত্তেজনা বাড়ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *