একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না—এই ধারণাকে অসাংবিধানিক ও গণতন্ত্রবিরোধী আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ (Salahuddin Ahmed)। রোববার (২০ জুলাই) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে যুক্তির ভিত্তিতে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপি (BNP) নেতা।
সালাহউদ্দিন বলেন, “একই ব্যক্তি যদি দলীয় প্রধান হন, তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অযোগ্যতা নেই। বরং এটি গণতন্ত্রের একটি স্বাভাবিক চর্চা। পার্লামেন্টারি পার্টির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন—এটাই নিয়ম। সেখানে কে দলীয় প্রধান তা কোনো বাধা হতে পারে না।”
তিনি উল্লেখ করেন, অধিকাংশ সদস্যই মনে করেন প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা হিসেবে একই ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এ দুটি পদ প্রায় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকায় এখানে কোনো বিরোধ নেই। তবে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে দলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ নিয়ে। এই বিষয়ে ইতোমধ্যেই কমিশনের কাছে লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিএনপি।
যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে সালাহউদ্দিন বলেন, “গণতন্ত্রের সুতিকাগার ব্রিটেনেও একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হন। এটা কোনো ব্যতিক্রম নয়। বরং যেসব দেশে এমনটা হয় না, তা-ই ব্যতিক্রম। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দল বা জোট নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয় কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেখানে দলীয় প্রধান হলে কোনো যোগ্যতা হারিয়ে যায় না।”
তিনি আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে দলীয় প্রধানকে বাদ দেওয়ার কোনো প্র্যাকটিস নেই। যদি এমনটা করা হয়, তবে সেটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার শামিল হবে। দলের প্রধান হিসেবে যে কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন পাওয়ার অধিকার রাখেন। এটা উন্মুক্ত রাখা উচিত।”
সালাহউদ্দিনের মতে, “একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হবেন কি না, সেটি নির্ধারণ করবে পার্লামেন্টারি পার্টি। তারা চাইলে অন্য কাউকেও মনোনীত করতে পারে। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আমরা বলেছি, অপশনটা যেন খোলা থাকে। দলীয় প্রধানকে শুধু প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।”
বিএনপির এই নেতা জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে প্রস্তাবিত কাঠামোর খসড়া কমিশন সকল দলের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তুত করেছে। এখন এই খসড়ায় কারো কোনো আপত্তি বা সংশোধনী থাকলে তা নিজ নিজ দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করে আগামীকাল বা পরশু উপস্থাপন করা হবে।
অর্থাৎ, বিএনপির পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা এসেছে—গণতন্ত্রের রীতি মেনেই দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং এমন নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া হলে তা হবে রাজনৈতিক অধিকার হরণ।