প্রশিক্ষণের প্রথম সোলো ফ্লাইটেই প্রাণ গেলো ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের

ঢাকার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (Milestone School and College) এলাকায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর (Bangladesh Air Force) একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন তরুণ পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর (Flight Lieutenant Tawkir Islam Sagar)। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর – আইএসপিআর (ISPR) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এই ফ্লাইটটি ছিল তৌকিরের জীবনের প্রথম একক বা ‘সোলো’ উড়ান। সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলায় অবস্থিত বিমান বাহিনীর এ কে খন্দকার ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান, যেটি প্রশিক্ষণের অংশ ছিল। উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটির শিকার হয় বিমানটি।

আইএসপিআর জানিয়েছে, দুর্ঘটনার মুহূর্তে বড় ধরনের প্রাণহানি ঠেকাতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান বিমানটিকে জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে নিতে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি—দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে সেটি বিধ্বস্ত হয়।

বিধ্বস্তের পরপরই আহত তৌকিরের পালস পাওয়া যায়। হেলিকপ্টার এমআই-১৭ তে করে তাঁকে দ্রুত রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয় এবং সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনার সময় কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ঠিক বাইরে বের হচ্ছিল। নিরাপত্তাকর্মী আকবর হোসেন বলেন, “আমার অবস্থান ছিল ভবন থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে। ক্লাস শেষে ছাত্ররা বের হচ্ছিল, তখনই এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। দেখি, নারিকেল গাছ ভেঙে পড়ছে আর বিমানটি সোজা ভবনে ধাক্কা দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়।”

তিনতলা ভবনের নিচতলা ছিল আংশিকভাবে মাটির নিচে, যেখানে ক্লাস হয় না—সেই স্থানে বিমানটি গিয়ে ঢোকে, ফলে বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়।

দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, “আমরা ক্লাসে বসা, হঠাৎ শব্দ হয়। সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। স্যার এসে বলেন—বিল্ডিংয়ে আগুন। তারপর দেখি ফায়ার সার্ভিস এসেছে।”

মাইলস্টোন কলেজ-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল বলেন, “জেটটি বিদ্যালয় শাখার ক্যানটিন লাগোয়া একটি ক্লাসরুমে পড়ে। সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী এলাকা ঘিরে রেখেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষকেও ভিতরে যেতে দেওয়া হয়নি।”

আইএসপিআর জানায়, ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে। যান্ত্রিক ত্রুটি কীভাবে ঘটলো, তা বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা হবে।

একজন তরুণ পাইলট, যার সামনে ছিল একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ—তার প্রথম একক উড়ানই হয়ে উঠলো শেষ উড়ান। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে, শত প্রাণ বাঁচিয়ে তৌকির ইসলাম সাগর রেখে গেলেন এক নিঃশব্দ বীরত্বগাথা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *