নিহতের সংখ্যা একশ’ ছাড়িয়ে যেতে পারে!

রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন কলেজের পাশে সংঘটিত ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় (Airplane Crash) প্রাণহানির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সশস্ত্র বাহিনীর একটি ইন্টেলিজেন্স সূত্রের বরাতে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৯ জনে পৌঁছালেও তা আগামী কয়েকদিন বা সপ্তাহের মধ্যেই একশ’র ঘর ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান (F-7 Fighter Jet) ভবনের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। তীব্র গতির এই আঘাতে ভবনটি আংশিক ধ্বংস হয়, এবং দুর্ঘটনাস্থলে থাকা অনেক শিক্ষার্থী ও পথচারী গুরুতর দগ্ধ হন। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মৃত্যুহার বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুরো ভবনটি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দুর্ঘটনার সময় ক্লাস চলাকালীন অবস্থায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ভবনে উপস্থিত ছিলেন। বিস্ফোরণের পরপরই ফুয়েল ট্যাঙ্ক থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুন আশপাশের এলাকাতেও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।

এখন পর্যন্ত আহতের সংখ্যা ১৬০ ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ভর্তি রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং সিএমএইচ-ঢাকা হাসপাতালে।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৩৬ জন দগ্ধের তালিকায় অধিকাংশই শিশু ও কিশোর। তাদের মধ্যে রয়েছেন— শামীম ইউসুফ (১৪), মাহিন (১৫), আবিদ (১৭), রফি বড়ুয়া (২১), সায়েম (১২), মুনতাহা (১১), নাফি (১০), মেহেরিন (১২), জায়েনা (১৩), রোহান (১৪), মাহিয়া (১৩), তাসমিয়া (১৫), তৌফিক (১৩), এবং আরও অনেকে।

এছাড়া, নিহতদের মধ্যেও রয়েছে একাধিক শিশু, যেমন তানভীর আহমেদ (১৩) ও জুনায়েদ (১১)। তাদের পরিবার সদস্যরা হাসপাতাল এবং দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে সন্তানদের খোঁজে আতঙ্কিত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

একজন নিখোঁজ শিক্ষার্থী সায়েরের পিতা সেলিম জাহিদ, যিনি একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত, সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন: “আমার সায়েরকে এখনো খুঁজে পাচ্ছি না। ও মাইলস্টোনের মেইন ক্যাম্পাসে ছিল, বিমানটা ঠিক সেখানেই ক্র্যাশ করেছে।” আরেক অভিভাবক লিয়ন মিরও ফেসবুক লাইভে এসে কাঁদতে কাঁদতে মেয়ের খোঁজে সাহায্য চেয়েছেন। পরে জানা গেছে, তার মেয়ে ফাতেমাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

আইএসপিআর (ISPR) এর পাঠানো বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, হাসপাতালভেদে হতাহতের হিসাব এমন—
– কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত ৮
– বার্ন ইনস্টিটিউটে আহত ৭০, নিহত ২
– সিএমএইচ-ঢাকায় আহত ১৪, নিহত ১১
– কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটালে নিহত ২
– লুবনা জেনারেল হসপিটালে আহত ১১, নিহত ২
– উত্তরা আধুনিক হসপিটালে আহত ৬০, নিহত ১
– উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটালে আহত ১, নিহত নেই

বিমানটি কেন বিধ্বস্ত হলো, তা এখনও পরিষ্কার নয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, উড্ডয়নের সময় কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধারকারী দল এখনও দুর্ঘটনাস্থলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

ঘটনার পর থেকেই রাজধানীজুড়ে এবং সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সরকার আগামীকাল মঙ্গলবার (২২ জুলাই) একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দ্রুত উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *