বড় ছাড় দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে আজ সব দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে : আলী রীয়াজ

নির্বাচন কমিশনের গঠনতন্ত্র নিয়ে বহুদিন ধরে চলা রাজনৈতিক টানাপোড়েনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংশোধিত সংবিধানের আওতায় নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়েছে, যাতে স্পিকারের নেতৃত্বে একটি বাছাই কমিটির মাধ্যমে নতুন কমিশনারদের নিয়োগ নিশ্চিত করা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলী রীয়াজ (Ali Riaz), জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি।

বুধবার (২৩ জুলাই) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে চলমান দ্বিতীয় ধাপের রাজনৈতিক সংলাপের ১৮তম দিন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, নতুন প্রস্তাবে সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে স্পষ্টভাবে কমিশনের কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও আইনে নির্ধারিতসংখ্যক কমিশনারকে নিয়ে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি থাকবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার। সদস্য হিসেবে থাকবেন ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দল থেকে), প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা এবং প্রধান বিচারপতির (Chief Justice) প্রতিনিধি হিসেবে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি।

আলী রীয়াজ বলেন, “কমিটি বিদায়ী কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে ইচ্ছুক প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য আহ্বান করবে। পাশাপাশি, নিজ উদ্যোগেও তারা যোগ্য প্রার্থীদের খুঁজে বের করবে।”

এছাড়াও, বাছাই কমিটি যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এবং প্রতিটি কমিশনার পদের জন্য একজন করে নাম নির্বাচন করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি এই প্রস্তাবনার ভিত্তিতে পাঁচ বছরের জন্য তাদের নিয়োগ দেবেন।

কমিটিকে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেবে স্পিকারের অধীন সংসদ সচিবালয়। আর সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের ২, ৪, ৫ ও ৬ উপ-অনুচ্ছেদ অপরিবর্তিত থাকলেও, ৫ নম্বর উপ-অনুচ্ছেদে একটি নতুন ধারা যোগ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর ফলে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম জাতীয় সংসদের অধীন আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে।

এই প্রস্তাবনায় নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি পৃথক আইন ও আচরণবিধি প্রণয়নের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আলী রীয়াজ বলেন, “বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের আগের কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসে আজ যে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, তা নিঃসন্দেহে একটি স্বাধীন ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা এই দায়িত্বশীল ভূমিকায় অংশগ্রহণের জন্য সব রাজনৈতিক দলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”

নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘদিনের অনাস্থা এবং দলীয় বিভাজনের আবহে এই ঐকমত্য রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *