নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়া অন্যান্য সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি (BNP)। আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পর দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed) এ মন্তব্য করেন।
তিনি জানান, “আমরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুধু নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত জায়গায় একমত। তবে অন্যান্য সমস্ত এনসিসি—সংবিধিবদ্ধ কিংবা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ সংবিধানে নিয়ে আসার বিষয়ে আমরা একমত নই।” সালাহউদ্দিন আহমদের মতে, সংবিধানে এই বিষয়ে পৃথক কমিশন রাখার প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট আইন থাকা উচিত, আর যেখানে সে আইন নেই, সেখানে তা তৈরি করতে হবে। এ আইনের মাধ্যমেই নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কার্যক্রমের কাঠামো নির্ধারণ সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানিকভাবে স্বাধীনতা দেওয়া হলেও বাস্তবতার নিরিখে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি যতক্ষণ না কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়।” তিনি মনে করেন, কেয়ারটেকার সরকার কার্যত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে—এখন শুধু কিছু আইনি প্রক্রিয়া বাকি আছে। তবে পরবর্তী সংসদ চাইলে কেয়ারটেকার সংক্রান্ত আইন পুনঃপ্রণয়ন করতে সক্ষম বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে সালাহউদ্দিন বলেন, “নিয়োগ প্রক্রিয়াটা এমনভাবে করতে হবে যাতে কমিশন কার্যক্রমে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন থাকে।”
নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার রূপরেখাও তুলে ধরেন বিএনপির এই নেতা। তার ভাষ্যে, নির্বাচন কমিশন নিয়োগে একটি সিলেকশন কমিটি গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। এই কমিটিতে থাকবেন স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং বিচার বিভাগের একজন প্রতিনিধি। এ কমিটি নাম চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে।
তবে শুধুমাত্র এই সিলেকশন কমিটি যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তার মতে, এ কমিটিকে সহায়তার জন্য আলাদা করে একটি অনুসন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি) গঠন করতে হবে, যা একটি আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। সেই আইনে বলা থাকবে কীভাবে বায়োডাটা আহ্বান করা হবে, কীভাবে যাচাই-বাছাই হবে—সবকিছুই প্রক্রিয়াগতভাবে নির্ধারিত থাকবে।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হলো যে, নির্বাচন কমিশন ব্যতীত অন্য কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে তারা একমত নয়। বরং স্বচ্ছ আইন এবং কাঠামোগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার ওপর জোর দিচ্ছে দলটি।