গণঅধিকার পরিষদ (Gono Odhikar Parishad)–এর সভাপতি নুরুল হক নুর (Nurul Haque Nur) অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। বুধবার (২৩ জুলাই) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে তিনি অভিযোগ করেন, সরকার একটি নিবন্ধনহীন ও সদ্য গঠিত দলকে বড় রাজনৈতিক দলের মর্যাদা দিয়ে পক্ষপাতিত্ব দেখাচ্ছে। এতে করে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের ওপর আস্থা কমে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
নুর বলেন, “গতকাল রাতে বৈঠকে যেসব দলকে বড় দল হিসেবে ডাকা হয়েছে, তাদের মধ্যে একটি দল তো নিবন্ধিতই নয়। আজকের ১৩ দলের বৈঠকে প্রায় সবাই এই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।” এই প্রসঙ্গে তিনি এনসিপি (NCP)-এর কথা উল্লেখ করে বলেন, “সরকার এনসিপির প্রতি স্পষ্ট পক্ষপাত দেখাচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “একটি গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত জনপ্রিয় সরকার যদি কোনো নির্দিষ্ট দলের পক্ষে অবস্থান নেয়, তাহলে জনগণের আস্থা আর থাকবে না। তখন নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ন্যায্য হয়ে যাবে।”
নুরুল হক নুর চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যাকাণ্ড এবং গোপালগঞ্জে সম্ভাব্য সহিংসতা নিয়েও সরকারকে দায়ী করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অক্ষমতা নিয়ে তিনি বলেন, “যদি সরকার আগে থেকেই এসব বিষয়ে আঁচ না করতে পারে, তাহলে প্রশাসনিক সক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। পতিত স্বৈরাচারী শক্তিগুলো আন্দোলনের মধ্যে নাশকতা করতে পারে—এই আশঙ্কা আমরা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পক্ষপাতের অভিযোগ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে “এক-দুইটি দলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিলে বৃহত্তর জনগণের আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষিত হয়” বলেও মন্তব্য করেন গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা। তিনি অনুরোধ করেন, রাজনৈতিক চাপ মুক্তভাবে, নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ছাত্র রাজনীতি
স্থানীয় সরকার কাঠামোর অকার্যকারিতার বিষয়েও সরব হন নুর। তার মতে, “জনপ্রতিনিধি না থাকায় এলাকাভিত্তিক বিশৃঙ্খলা বেড়েছে, প্রশাসন একা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।” ধাপে ধাপে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেন তিনি, যাতে করে জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয় এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরে আসে।
ছাত্র রাজনীতি নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। নুর অভিযোগ করেন, গত ১১ মাসে এনসিপি ছাড়া আর কোনো ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বসেনি। তিনি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আহ্বান জানান, যাতে সরকার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বলেও জানান।
সব মিলিয়ে, সরকারের কার্যক্রম ও পক্ষপাতমূলক আচরণের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন নুরুল হক নুর, যা একটি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।