জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও আন্দোলনের ছাত্রনেতারা ক্রমেই জনগণের আস্থা হারাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) সভাপতি মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু। বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর সঙ্গে ১৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মঞ্জু বলেন, “গতকাল উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে উপদেষ্টারা ৯ ঘণ্টা আটকে ছিলেন। এর আগে যমুনায় এক উপদেষ্টার দিকে বোতল ছোড়া হয়। এসব ঘটনার অর্থ, জনগণের ক্ষোভ এখন উপদেষ্টাদের প্রতিও ছড়িয়ে পড়েছে।”
“ছাত্রনেতারাও হারাচ্ছেন গ্রহণযোগ্যতা”
এবি পার্টি সভাপতি মনে করেন, শুধু সরকার নয়, জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারাও জনগণের আস্থা হারাচ্ছেন। “আমরা যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে গণ-অভ্যুত্থানের অংশীদার ছিলাম, আমাদের গ্রহণযোগ্যতাও কমেছে। একইভাবে ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও ধীরে ধীরে ক্রেডিবিলিটি হারাচ্ছেন,” বলেন মঞ্জু।
তিনি দাবি করেন, ড. ইউনূস নিজেও বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, সাম্প্রতিক বিশৃঙ্খলা ও ধোঁয়াশার মধ্যে ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো সুযোগ নিচ্ছে। গোপালগঞ্জ ও উত্তরায় ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনা ও তার পরবর্তী অস্থির পরিস্থিতি এই ষড়যন্ত্রেরই ইঙ্গিত হতে পারে বলে উপদেষ্টা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
“পতনের পর বিভক্ত রাজনীতি”
শেখ হাসিনার পতনের পর রাজনৈতিক অঙ্গন এখন বিভক্ত—এমন দাবি করে মঞ্জু বলেন, “আমরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছি। কেউ কেউ এই পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক সুযোগ হিসেবে নিচ্ছেন, আবার কেউ বিভাজনের জন্য সরকারকেই দায়ী করছেন।”
সংস্কার ও নির্বাচনে সংশয়
মঞ্জু বলেন, “দুটি বিষয় নিয়ে এখন বড় প্রশ্ন—সংস্কার কি আদৌ কার্যকর হবে? আর নির্বাচন কি সুষ্ঠুভাবে হবে?” বৈঠকে বেশ কয়েকটি দল অভিযোগ করেছে, সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। “কোনো দলকে প্রটোকল দেওয়া হচ্ছে, আবার কারও কারও জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা বরাদ্দ করা হচ্ছে।”
“সংস্কার ও নির্বাচন না পারলে দায়িত্ব ছাড়ুন”
সরাসরি প্রধান উপদেষ্টাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির আহ্বান জানিয়ে মঞ্জু বলেন, “আমি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছি—যদি আপনি সংস্কার প্রক্রিয়া কার্যকরভাবে সম্পন্ন করতে না পারেন, এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারেন, তবে দয়া করে দায়িত্ব ছেড়ে দিন।”
তিনি আরও দাবি করেন, বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি একে অপরের বিরুদ্ধে ধারালো ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে, যা উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। “এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে কি না, তা নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি হবে।”
“সরকার দুর্বল, সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না”
সরকারের বর্তমান ভূমিকা নিয়েও কড়া সমালোচনা করেন মঞ্জু। “এই সরকারকে দুর্বল বলেই মনে হচ্ছে। তারা কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কোনো উপদেষ্টাকে বহিষ্কার করেনি, কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শুধু সচিবালয় বা যমুনা ঘেরাও হলে তবেই নড়াচড়া দেখা যায়,” বলেন তিনি।
মঞ্জুর বক্তব্যে স্পষ্ট, রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন বিশ্বাসের সংকট চরমে পৌঁছেছে—সরকার, উপদেষ্টা পরিষদ এমনকি ছাত্রনেতাদের ওপরও মানুষের আস্থা নড়বড়ে। এমন বাস্তবতায় সংস্কার ও নির্বাচন—এই দুই পরীক্ষায় সরকার ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সংকটে পড়বে বলেই মনে করছেন তিনি।