ছাত্র-জনতার টানা আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। এরপরই তার ঘনিষ্ঠ অনেক আমলা ও রাজনীতিক আত্মগোপনে চলে যান বা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তাদের অনেকে পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারও হন। তবে সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত চরিত্র হিসেবে রয়ে যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (ABM Khairul Haque)।
দীর্ঘদিন ধরে গা-ঢাকা দিয়ে থাকা এই সাবেক বিচারপতিকে অবশেষে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশ। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রভাবিত একক রায়ে ‘উচ্ছেদ’
বেগম খালেদা জিয়া (Khaleda Zia) ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ঘটনায় যেসব বিচারপতি জড়িত ছিলেন, তাদের মধ্যে খায়রুল হক ছিলেন প্রধান মুখ। তার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির একটি আপিল বেঞ্চ—যেখানে ছিলেন মোজাম্মেল হোসেন ও সুরেন্দ্র কুমার সিনহাও—শুনানি ছাড়াই একতরফা রায় দিয়ে খালেদা জিয়ার সেই ঐতিহাসিক বাড়ি থেকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন।
এই ঘটনার পর থেকেই খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ উঠতে থাকে। তাকে বিবেচনা করা হয় শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রকল্পে ‘আইনি বৈধতা’ দেওয়া এক মুখ্য মুখ হিসেবে।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যানে পরিণত হওয়া, তারপর ফের বিতর্ক
হাসিনার সরকার পতনের পর খায়রুল হক আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পদ থেকেও পদত্যাগ করেন, ১৩ আগস্ট। তবে এটি ছিল বহু বিতর্কের পরিণতি। কারণ, প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেওয়ার প্রায় দুই বছর পর তিনি এই পদে নিয়োগ পান—যা অনেকের চোখে ‘সরকারি পুরস্কার’ ছিল।
এর আগে তিনি এক রায়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক নন বলেও মন্তব্য করেছিলেন। এই রায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। একপক্ষ প্রশংসা করলেও, আরেকপক্ষ এটিকে ইতিহাস বিকৃতি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দেয়।
গ্রেফতারের আগেই একের পর এক মামলা
সরকার পতনের পর খায়রুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। ১৮ আগস্ট ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ইমরুল হাসান তার বিরুদ্ধে মামলা করেন, যেখানে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় একই ইস্যুতে আরও একটি মামলা হয়। আর ২৮ আগস্ট আরেক আইনজীবী শাহবাগ থানায় দায়ের করেন দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির অভিযোগে মামলা।
এসব ঘটনার পর খায়রুল হক আর প্রকাশ্যে আসেননি। তাকে গ্রেফতারের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে বিক্ষোভ করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন।
বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আসনে থেকে যিনি ফ্যাসিবাদের প্রতিষ্ঠা ও অপব্যবহারে অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ—সেই এবিএম খায়রুল হক অবশেষে ধরা পড়লেন। ছাত্র-জনতার পরিবর্তিত বাংলাদেশে এখন তার বিচার চায় বহুজন।