শেরপুরে ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেওয়া এবং বাজারে চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রদলের দুই নেতাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছেন বিএনপির নিজ দলীয় নেতা-কর্মীরাই। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে লছমনপুর ইউনিয়নের কুসুমহাটি বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তরা হলেন মো. আল আমিন ইসলাম সাগর (২৮) ও মো. সবুজ আহাম্মেদ (৩৫), যাঁরা যথাক্রমে লছমনপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক সভাপতি। এ ঘটনায় তাঁদের দল থেকেও আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
স্থানীয় বিএনপি (BNP) নেতারা জানান, সাগর ও সবুজ দীর্ঘদিন ধরে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত। বুধবার তাঁরা বলাইয়েরচর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলেন চাঁদা দাবি করতে। চেয়ারম্যান চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে লাঞ্ছিত করেন এবং পরে লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে তালা লাগিয়ে দেন। সচিবসহ অন্য কর্মচারীদেরও বের করে দেন। একইদিন তাঁরা কুসুমহাটি বাজারের একাধিক দোকানে গিয়েও চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠে।
অবশেষে বাজারের ব্যবসায়ীদের সহায়তায় স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন শেরপুর সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শারদুল ইসলাম মুরাদ ও সদস্যসচিব সুমন আহমেদ। তাঁরা বলেন, “আমরা আইন নিজের হাতে নেইনি, সংগঠনের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাঁদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি।”
এর আগে, ১৭ জুলাই দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সাগরের সভাপতি পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছিল।
ঘটনার পরপরই লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও মহিলা দলের নেত্রী আলেয়া বেগম বাদী হয়ে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এতে অভিযুক্ত হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয়েছে পাঁচজনের—সবুজ আহাম্মেদ, আল আমিন ইসলাম সাগর, ছায়দুর রহমান (৩২), মো. নূর শাহ আলম পাপ্পু (৩৮), ও মো. নূরনবী ইসলাম (২৫)।
লছমনপুর ইউনিয়ন বিএনপি-র আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ ও সদস্যসচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, “এই ছেলেগুলোর কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তারা ৫ আগস্টের পর থেকেই লাগামহীন হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন বাজারে চাঁদা দাবি, পরিষদে তালা লাগানোসহ নানা অপকর্ম করেছে। তাই আমরা তাদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।”
লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শরিফ আল জায়েদ বলেন, “চেয়ারম্যান না থাকায় আমাকে জোর করে কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে তালা মেরে দিয়েছে।” এদিকে কুসুমহাটি বণিক সমিতির সভাপতি এংরাজ আলী মেম্বার বলেন, “ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও তারা চাঁদা তুলেছে। এতে শুধু আইন নয়, দলীয় মর্যাদাও ক্ষুণ্ন হয়েছে।”
এ বিষয়ে শেরপুর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ পলাশ বলেন, “বিএনপিতে চাঁদাবাজির কোনো জায়গা নেই। দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি অপকর্মে জড়ায়, তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়দুল আলম জানান, “চাঁদাবাজির অভিযোগে দুইজনকে আটক করা হয়। পরে নিয়মিত মামলায় তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
স্থানীয় রাজনীতিতে এই ঘটনা ব্যতিক্রমী হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে একদলীয় নেতারা নিজেরাই দলের দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখছেন।