উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ-এ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া আফসান ওহির মা আফসানা আক্তার প্রিয়া (২৮)-এর মরদেহ তিনদিন পর ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে। শিশুপুত্রকে স্কুল থেকে আনতে এসে মৃত্যু হয় মায়ের—যার খোঁজে দিনরাত অপেক্ষায় ছিল পুরো পরিবার।
মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে ২২ জুলাই। এরপর থেকেই তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আফসান ওহি কাঁদছিল মায়ের জন্য। কেবল একজন নয়, ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন আরও অন্তত পাঁচ নারী। তবে এদের কেউই তখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। দগ্ধ ও ছিন্নভিন্ন দেহাংশগুলো সিএমএইচে রাখা হয়, পরিচয় নিশ্চিত করতে শুরু হয় ফরেনসিক ডিএনএ বিশ্লেষণ।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ডিএনএ পরীক্ষায় আফসানা আক্তার প্রিয়ার মরদেহ শনাক্ত হয়েছে। প্রিয়ার বাবা মো. আব্বাস উদ্দিন ও মা মোসা. মিনু আক্তারের দেওয়া ডিএনএ নমুনার সঙ্গে মরদেহের নমুনা মিলে গেলে প্রমাণ নিশ্চিত হয়।
সিআইডি-র বিশেষ পুলিশ সুপার জসিম উদ্দীন খান বলেন, “ঘটনার পর ১১টি অশনাক্ত মরদেহ ও দেহাংশ থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়। প্রোফাইল মেলানো হয় পাঁচটি পরিবারের ১১ সদস্যের সঙ্গে। এতে পাঁচ নারীর পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।”
যাদের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে তাঁরা হলেন:
- ওকিয়া ফেরদৌস নিধি (মো. ফারুক হোসেন ও সালমা আক্তার দম্পতির মেয়ে)
- লামিয়া আক্তার সোনিয়া (মো. বাবুল ও মাজেদা দম্পতির মেয়ে)
- আফসানা আক্তার প্রিয়া (মো. আব্বাস উদ্দিন ও মোসা. মিনু আক্তারের মেয়ে)
- রাইসা মনি (মো. শাহাবুল শেখ ও মিম দম্পতির মেয়ে)
- মারিয়াম উম্মে আফিয়া (আবদুল কাদির ও উম্মে তামিমা আক্তার দম্পতির মেয়ে)
আফসান ওহির পরিবার জানায়, প্রিয়া নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই সন্তান মায়ের খোঁজে দিনরাত কাঁদছে। কেউ বলতে পারছিল না সে বেঁচে আছে কি না। আজ সিআইডির ঘোষণার পর সন্তান জানলো তার মা আর ফিরবে না।
উল্লেখ্য, গত ২২ জুলাই দুপুরে একটি যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশেই বিধ্বস্ত হলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলেই বহু মানুষ দগ্ধ হন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। সেই ট্র্যাজেডির গভীর রেশ কাটিয়ে ওঠার আগেই, ডিএনএ শনাক্তের মাধ্যমে একে একে সামনে আসছে করুণ বাস্তবতা।