একাত্তরের সঙ্গে চব্বিশের তুলনায় ক্ষুব্ধ জেড আই খান পান্না, দুঃখ প্রকাশ আসিফ নজরুলের

একাত্তরের গণহত্যার সঙ্গে ২০২৪ সালের সহিংসতার তুলনা করে দেওয়া বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী এবং আইন ও শালিস কেন্দ্র (Ain o Salish Kendra – ASK)–এর চেয়ারপার্সন জেড আই খান পান্না (Z.I. Khan Panna)। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক সংক্ষিপ্ত স্ট্যাটাসে তিনি বিষয়টি নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন।

তিনি লেখেন, “দুঃখিত, আসিফ নজরুল (Asif Nazrul), একাত্তরের গণহত্যার সঙ্গে চব্বিশের তুলনা ঠিক না। একাত্তর হয়ত আপনি দেখেন নাই।”

এই প্রতিক্রিয়া আসে এর আগের এক বক্তব্যকে ঘিরে, যেখানে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘জুলাই গণহত্যার বিচার: আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “শেখ হাসিনা এবং তার দোসররা যে অপরাধ বাংলাদেশে করেছে, আমি দুঃখিত, আমার মনে হয় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী এত জঘন্য অপরাধ করেনি। মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা, আহত মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা—এটা ছিল ভয়ংকর নৃশংসতা।”

তিনি আরও বলেন, “৭১ সালে ডেডবডি পুড়িয়ে ফেলেছে এমন ফুটেজ আমি দেখি নাই। কিংবা গুলিবিদ্ধ এক আহত ব্যক্তিকে সাহায্য করতে গেলে তাকেও গুলি করার ঘটনা পড়িনি কোনো মুক্তিযোদ্ধার বর্ণনায়। হয়তো অন্য রকম নৃশংসতা ছিল, কিন্তু এ ধরনের ছিল না।”

এই বক্তব্যের জেরে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই একাত্তরের গৌরবময় ইতিহাসকে খাটো করার অভিযোগ তোলেন আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে।

পরে, সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে সংশোধনী এনে দুঃখ প্রকাশ করেন। লিখেন, “শেখ হাসিনার নৃশংসতার সঙ্গে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার তুলনা করা উচিত হয়নি। দুটোই জঘন্যতম অপরাধ, তবে যারা মনে করেছেন আমি একাত্তরের গণহত্যাকে খাটো করেছি, তাদের কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।”

এই প্রেক্ষাপটেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানান জেড আই খান পান্না। তিনি একজন বর্ষীয়ান মানবাধিকারকর্মী এবং দীর্ঘদিন ধরে মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যুক্ত। দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং সামাজিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বরাবরই তার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে তিনি স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কার্যক্রম নিয়েও প্রকাশ্যে সমালোচনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। তার এই অবস্থান তাকে সামাজিক-রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *