নয় শতাধিক পুলিশী নিরাপত্তায় পথসভায় , হাসনাত বললেন , বিএনপি বা এনসিপির নয়, পুলিশ হবে জনতার

নয় শতাধিক পুলিশ সদস্যের কড়া নিরাপত্তায় গাজীপুরের রাজবাড়ি মাঠে অনুষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভায় দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (Hasnat Abdullah) বলেন, পুলিশকে কোনো রাজনৈতিক দলের ‘লাঠিয়াল বাহিনী’ হয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। মঙ্গলবারের (২৯ জুলাই) এই সমাবেশে তিনি সাফ জানিয়ে দেন—“পুলিশ বিএনপির হোক কিংবা এনসিপির—তা নয়, পুলিশ হতে হবে জনতার।”

পুলিশ ব্যবস্থায় সংস্কার ও পেশাগত স্বাধীনতার দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, “পুলিশে বিভাজন রয়েছে। কোনো ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার নিচের সারির সদস্যদের ওপর পড়ে—কনস্টেবল থেকে শুরু করে ওসি পর্যন্ত। অথচ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে থাকেন।”

তিনি বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে আবারও পুলিশের নিচের স্তরের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে ফেলা হবে। এ অবস্থার অবসান চাইলে দ্রুত পুলিশ সংস্কার কমিশন (Police Reform Commission) গঠনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।”

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে ক্ষোভ

এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার ভাষায়, “আপনি এমন একটা দেশে বাস করছেন, যেখানে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চিত্র দেখলে আপনি হতাশ হবেন। আপনি স্কুলে যাচ্ছেন, কিন্তু হাসিনার অব্যবস্থাপনার কারণে বিমানের ধ্বংস আপনাকে গ্রাস করতে পারে।”

ভারতের এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশের নেই কোনো ‘আয়রন ডোম’। তার মতে, “দেশকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, এবং ইসরায়েলি প্রযুক্তির মত উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।”

তিনি আশ্বাস দেন, “এনসিপি যদি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পায়, তাহলে প্রতিরক্ষা খাতে আধুনিকায়ন এনে বাংলাদেশকে একটি আত্মনির্ভর ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে রূপান্তর করা হবে।”

সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা

শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকার সেনাবাহিনীকে যে ‘রাজমিস্ত্রি’ বানিয়ে ফেলেছে, তা নিয়েও তিনি ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। “সেনাবাহিনীকে কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়েছে,”—এই অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীকে যুগোপযোগী করে তুলতে হবে। প্রয়োজন বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি।”

এনসিপির পক্ষ থেকে তিনি সামরিক খাতে ঢেলে সাজানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করতে হবে। কেবল রাজপথে না, যুদ্ধক্ষেত্রেও তারা যেন আন্তর্জাতিক মানে প্রতিযোগিতা করতে পারে—সেই প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই।”

এই পথসভায় হাজারখানেক পুলিশ মোতায়েন থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। একটি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলের সভায় এত বিশাল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন কি রাজনৈতিক পক্ষপাত নাকি সতর্কতার অংশ—এই প্রশ্নও উঠেছে নানা মহলে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *