সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ আসাদুজ্জামান নূর (Asaduzzaman Noor)-এর বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও প্রায় ১৫৯ কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti-Corruption Commission)।
মঙ্গলবার দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেন। এজাহারে বলা হয়, নূর তার জ্ঞাত আয়ের উৎস ছাড়া ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। একইসঙ্গে তার নামে থাকা ১৯টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকা পাওয়া গেছে, যার বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি।
দুদক জানিয়েছে, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তার ঘোষিত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বরং এতে অর্থপাচারের আশঙ্কা রয়েছে। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে কমিশন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা; মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করেছে।
নূরের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনা নতুন নয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরপর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় সংঘটিত একটি সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঢাকার বেইলি রোডের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে। আদালত তখন তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন, এবং তখন থেকেই তিনি কারাগারে রয়েছেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, নূরের নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় আরও একাধিক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা তার বিরুদ্ধে আইনগত চাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
এছাড়াও, নূর দীর্ঘদিন ধরে এশিয়াটিক (Asiatic) নামের একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন নিয়েও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে দুদক। ধারণা করা হচ্ছে, এই সংস্থার মাধ্যমে কিছু অবৈধ লেনদেন পরিচালিত হয়ে থাকতে পারে।
সাবেক মন্ত্রী হিসেবে জনমানসে যিনি একসময় গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় ছিলেন, তার বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগে রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি, তবে তদন্তের অগ্রগতি অনুযায়ী মামলার ভবিষ্যৎ গতি নির্ধারিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।