‘আবার এক–এগারো ঘটতে পারে, এ কথা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না’—এই সরল অথচ শঙ্কামিশ্রিত বাক্যে দেশের রাজনৈতিক আবহে নতুন করে আলোড়ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir)। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)-এ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “সবাইকে এখন সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আবারও আরেকটি এক–এগারো ঘটে যাওয়া অসম্ভব নয়।”
সেদিনের সেই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের দুঃস্মৃতি তুলে এনে মির্জা ফখরুল জানান, বর্তমান সরকার দেশকে এমন এক অনিশ্চিত জায়গায় ঠেলে দিয়েছে, যেখানে অতীতের মতো আরেকটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অবস্থা সেই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।
‘পিআর পদ্ধতি অলীক, দেশের মানুষ বোঝে না’
বিএনপি (BNP)-র মহাসচিব তার বক্তব্যে পিআর (প্রতিনিধিত্বমূলক) নির্বাচনী পদ্ধতিরও কঠোর সমালোচনা করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, “পিআর পদ্ধতি একটি অলীক ধারণা। দেশের সাধারণ মানুষ এ পদ্ধতির কোনো স্পষ্টতা বা কার্যকারিতা বোঝে না। এটি কেবল একটা ছলচাতুরি, যার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে।”
এমনকি, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস টেনে এনে তিনি বলেন, “একটি বিশেষ মহল গণতন্ত্র চলতে দিতে চায় না। এমনকি শেখ মুজিব (Sheikh Mujib)–ও চায়নি।” এই মন্তব্যে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন চান ফখরুল
বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচনের দাবিও জানান তিনি। বলেন, “ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হলে আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)-এর সম্মান ক্ষুণ্ন হতে পারে।” এর মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান এবং মানবাধিকার ইস্যুতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত দেন।
জুলাইয়ের চেতনা হারিয়েছে বাংলাদেশ
সাবেক রাজনৈতিক ঐক্যের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “জুলাইয়ের স্পিরিট থেকে বাংলাদেশ অনেক দূরে সরে গেছে। এখন আর ঐক্যের জন্য নয়, সবাই কেবল নিজের জন্য লড়ছে। এমনকি তরুণরাও এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চাঁদা তোলার জন্য চিঠি দিচ্ছে।”
সংস্কারের নামে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে
সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “সংক্ষেপে কিন্তু কার্যকর সংস্কার সম্ভব ছিল। কিন্তু তারা অলীক ধারণা নিয়ে আসছে। যেমন পিআর সিস্টেম—যেটা দেশের মানুষ একেবারেই বোঝে না।” তার মতে, এসব ‘সংস্কার’ আদতে গণতন্ত্রকে প্রান্তিক করে তোলার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এসময় তিনি আবারও সেই পুরনো বক্তব্যে ফিরে যান—“এ দেশে একটি মহল আছে যারা কখনোই গণতন্ত্র চায় না।” বক্তব্যে তার কণ্ঠে ছিল শঙ্কা, ক্ষোভ ও আগামী দিনের প্রতিরোধ গড়ার ইঙ্গিত।