রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদ (Shammi Ahmed)-এর বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পলাতক ছাত্রনেতা জানে আলম অপুকে। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার ওয়ারী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (DB)।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ১৭ জুলাই, যখন ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের’ সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে জানে আলম অপু ও রিয়াদের নেতৃত্বে একদল যুবক গুলশান ৮৩ নম্বর সড়কের ওই বাসভবনে হাজির হন। শাম্মী আহমেদ বিদেশে থাকায়, তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর (Siddiq Abu Zafar) কে জিম্মি করে তারা দাবি করেন ৫০ লাখ টাকা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, আতঙ্ক তৈরি করে সেখান থেকেই ১০ লাখ টাকা নিয়ে চলে যায় ওই চক্রটি।
এরপর ঘটনার দিন শনিবার সন্ধ্যায় আবারও চাঁদার টাকা নিতে এলে গুলশান থানা পুলিশের হাতে পাঁচজন ধরা পড়ে। জানা যায়, এই টাকার মধ্যে জানে আলম অপু—যিনি নিজেকে কখনও কখনও কাজী গৌরব অপু হিসেবেও পরিচয় দিতেন—নেন ৫ লাখ টাকা। বাকি টাকা নেন রিয়াদ।
ডিবি’র মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান শুক্রবার (১ আগস্ট) গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত অপু মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে ছিলেন। পরে অভিযান চালিয়ে তাকে ওয়ারী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় এর আগে গ্রেপ্তার হন:
– আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ – বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য ও ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক
– ইব্রাহীম হোসেন মুন্না – ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক
– সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব – ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য
– আমিনুল ইসলাম – সংগঠনের একজন কর্মী
উল্লেখযোগ্য যে, এই ঘটনার পর গ্রেপ্তারকৃত সবাইকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমিনুল বাদে বাকিরা বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন এবং রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ৭ দিনের রিমান্ডের চতুর্থ দিনে রিয়াদ তদন্তকারীদের জানান, টাকা কোথায় রাখা হয়েছে এবং কাদের কাছে তা গেছে তার বিস্তারিত তথ্য।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (Democratic Student Council) নামক সংগঠনটি কয়েক মাস আগে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতাদের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করে। এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংগঠনটি সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে, যার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন রিয়াদ।
জানে আলম অপু চাঁদাবাজির ঘটনায় এখন শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নয়, নিজ সংগঠন থেকেও চিরতরে বহিষ্কৃত। ঘটনা একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—ছাত্ররাজনীতির নামে কেউ অপরাধ করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।