“চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ভয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণ বিলম্বিত হলে আবারও জেগে উঠবে জনগণ: আব্দুল মঈন খান”

গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রচেষ্টা দীর্ঘায়িত হলে জনগণ আবারও জেগে উঠবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আবদুল মঈন খান (Abdul Moyeen Khan)। তিনি সতর্ক করেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেন অতীতের মতোই ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে’ রূপ না নেয়। শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (Revolutionary Workers Party) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান আলোচক হিসেবে আব্দুল মঈন খান বলেন, “গত পনেরো-ষোলো বছর ধরে গণতন্ত্রকামী মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলো যে আন্দোলন করেছে, সেই প্রত্যাশা এক বছরের মধ্যেও পূরণ হয়নি। অথচ ৯০ দিনের ব্যবধানে অতীতে আমরা সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখেছি। তাহলে এখন কেন হচ্ছে না? জনগণের সামনে এই প্রশ্ন আজ বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

তিনি যোগ করেন, “আমার মাঝে মাঝে মনে হয়- নতুন বন্দোবস্ত যেন আবার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত না হয়। ১/১১’র সময়ও আমরা এমন স্লোগান দেখেছিলাম—‘সবকিছু বদলে দাও’। কিন্তু সব পরিবর্তন আসলে প্রকৃত পরিবর্তন নয়। কসমেটিক সংস্কারে জনগণের ভাগ্য বদলায় না। সংবিধান বদলালেও যদি জনগণের হৃদয়ে পরিবর্তন না আসে, তা হলে কোনো অর্থ হয় না।”

জনগণের প্রত্যাশা ও রাষ্ট্রের জবাবদিহি প্রসঙ্গে মঈন খান আরও বলেন, “পরিবর্তনের নামে আমরা যেন আবারও ভুল না করি। সেই ভুলের চিহ্ন আমাদের ইতিহাসে রয়েছে। শুধুমাত্র মুখে সংস্কারের কথা বললে চলবে না, বাস্তব সংস্কার দরকার—যা জনগণের কল্যাণে কাজে আসে।”

আলোচনায় উঠে আসে বিচার ব্যবস্থার প্রশ্নও। গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি (Jonayed Saki) উল্লেখ করেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন—১৬০০ খুনের জন্য ১৬০০ মামলা হবে। এ প্রসঙ্গে মঈন খান বলেন, “যদি আমরা প্রতিটি হত্যার জন্য একটি করে মামলা করি এবং সেই বিচার প্রথাগতভাবে চলতে থাকে, তাহলে একেকটি মামলার নিষ্পত্তিতে ১৬০০ বছর লেগে যাবে। এই অপরাধগুলো সাধারণ নয়, সাধারণ সিআরপিসি দিয়ে এসবের বিচার সম্ভব নয়।”

তিনি পরামর্শ দেন, “এই ১৬০০ হত্যার জন্য একটি মাত্র মামলাই যথেষ্ট। রাষ্ট্র হতে পারে বাদী, আর যেখানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে—তারা হতে পারে সাক্ষী। যদি সাহসী ও ন্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সরকার থাকে, তবে এই বিচার ১৬ ঘণ্টার মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব।”

সভাপতিত্ব করেন সাইফুল হক (Saiful Haque), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক। বক্তব্য রাখেন নুরুল হক নুর (Nurul Haque Nur) – গণঅধিকার পরিষদের নেতা, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু (Sheikh Rafiqul Islam Babul) এবং বিএফইউজের বাছির জামাল প্রমুখ।

সাম্প্রতিক রাজনীতির সংকট, বিচারহীনতা ও প্রতিশ্রুত পরিবর্তনের বাস্তবতা নিয়ে এ আলোচনায় বক্তারা আক্ষেপ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তাঁরা একটি সুশাসনভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সম্মিলিত আন্দোলনের ডাক দেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *