মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় (Ministry of Liberation War Affairs) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা থেকে ৮ জনের নাম বাতিল করেছে। রোববার, ৩ আগস্ট গেজেট অধিশাখা একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এই তথ্য প্রকাশ করে। তবে এই সিদ্ধান্তের পেছনে কী কারণ রয়েছে, তা গেজেটে স্পষ্ট করা হয়নি—যা ইতোমধ্যেই জনমনে প্রশ্ন তুলেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং রুলস অব বিজনেস অনুসারে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাদের নাম বাদ পড়েছে, তাদের স্বজনদের জন্য এই সিদ্ধান্ত যেন বাজ পড়ে—এমনই অনুভূতি তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
গেজেট বাতিল হওয়া শহীদদের মধ্যে রয়েছেন:
– টাঙ্গাইলের মো. খলিলুর রহমান তালুকদার (গেজেট নম্বর ২২৯)
– ঢাকার রামপুরার মুসলেহ উদ্দিন (গেজেট নম্বর ২২৪)
– নরসিংদীর জিন্নাহ মিয়া (গেজেট নম্বর ৩৭৫)
– ঢাকার দৌলতখানের শাহ জামান (গেজেট নম্বর ৬১১)
– সাভারের মো. রনি (গেজেট নম্বর ৭৬৬)
– নারায়ণগঞ্জের তাওহিদুল আলম জিসান (গেজেট নম্বর ৮১৮)
– পটুয়াখালীর বশির সরদার (গেজেট নম্বর ৮২৩)
– শরীয়তপুরের বাঁধন (গেজেট নম্বর ৮৩৬)
এদের প্রত্যেকের নাম পূর্বে সরকার কর্তৃক স্বীকৃত শহীদ হিসেবে গেজেটে প্রকাশিত হয়েছিল। শুধু নাম নয়—তাদের মেডিকেল কেস আইডি, বাবা-মায়ের নাম, ঠিকানা, জেলা এবং বিভাগসহ বিস্তারিত তথ্য সরকারি গেজেটে উল্লেখ ছিল।
এর আগে সরকার দুই দফায় মোট ৮৪৪ জন শহীদের নামে গেজেট প্রকাশ করে, যা ঐতিহাসিকভাবে জুলাই অভ্যুত্থানের গুরুত্ব তুলে ধরেছিল। এই অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদের পরিবারের জন্য সরকার এককালীন ৩০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার ও পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে—এই আটজনকে শহীদ তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার যৌক্তিকতা কী? কোনো যাচাইবাছাই, তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়া কেবল গেজেট বাতিল করেই কি তাদের আত্মত্যাগ অস্বীকার করা যায়? অনেকেই মনে করছেন, বিষয়টি স্বচ্ছতার অভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
সরকারের তরফে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যা না আসায়, বাদ পড়া পরিবারগুলোর মধ্যে উদ্বেগ, ক্ষোভ এবং হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বলছেন, যদি প্রকৃত কারণ না জানানো হয়, তাহলে এই সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক সত্যকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে।