ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্র করে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে ছাত্ররাজনীতি। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়া একটি চ্যাটের স্ক্রিনশটকে ঘিরে ফের আলোচনায় এসেছে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী শিবির সদস্যদের ভূমিকা। শনিবার (২ আগস্ট) এক আলোচিত ফেসবুক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (Bangladesh Democratic Student Union)-এর ঢাবি আহ্বায়ক আব্দুল কাদের মন্তব্য করেন, “শিবিরের যেসব ছেলেরা গুপ্তভাবে ছাত্রলীগে ঢুকেছিল, তারাই সবচেয়ে নির্যাতনকারী হয়ে উঠেছিল।”
এই বক্তব্যে সমর্থন জানিয়েছেন আরও কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা, যাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (Bangladesh Chhatra League)। তবে পরদিন, অর্থাৎ রোববার (৩ আগস্ট), ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম (Sadik Kayem)-এর সঙ্গে কথিত একটি মেসেঞ্জার চ্যাটের স্ক্রিনশট প্রকাশ করে আব্দুল কাদের নতুন করে বিতর্ক উস্কে দেন।
‘স্ক্রিনশট রাজনীতি’ এবং পাল্টা বক্তব্য
কাদেরের দাবি, সেই চ্যাটে সাদিক কায়েম ছাত্রলীগের হয়ে নির্যাতনে জড়িত কয়েকজনকে মামলা থেকে রক্ষা করতে তদবির করেছিলেন। যদিও সাদিক দাবি করেন, “ওই স্ক্রিনশট আমার সঙ্গে নয়, এনসিপির (NCP) অন্য কয়েকজনের সঙ্গে হওয়া আলাপ।” তিনি এটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “স্ক্রিনশট পলিটিক্স শুরু হলে এনসিপি-বাগছাস থেকে শিবিরবিরোধী অনেক নেতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।”
সাদিক আরও বলেন, “চ্যাটের বিষয় ছিল ৫ আগস্টের ঘটনার পর মামলা তালিকা তৈরির সময়ে যেন নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার না হয়, সে জন্য সত্যতা যাচাই করা। মামলার তালিকা থেকে ‘সাঈদী’ নামের কাউকে বাদ দিতে বলিনি।”
অন্যদিকে, কাদের পাল্টা দাবি করেন, “হলে হলে ছাত্রলীগের যে নির্যাতনের তালিকা তৈরি হয়েছিল, সেখানে একাত্তর হলের হাসান সাঈদী ও এফ রহমান হলের তানভীর হাসান শান্তর নাম ছিল। আমি এসবের কথা বললে সাদিক বলেছিলেন ‘তোমরা দাও’। কিন্তু পরে মামলা থেকে তাদের নাম বাদ পড়ে যায়।”
শিবির-ছাত্রলীগের জটিল সম্পর্কের ইঙ্গিত
আব্দুল কাদেরের অভিযোগ আরও বিস্তৃত। তিনি বলেন, “সাঈদী ছাত্রলীগের হয়ে অপকর্ম করেছে, বহিষ্কৃতও হয়েছে, পরে প্রকাশ্যে শিবিরে সক্রিয় হয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়ে। সেই ঘটনায় সাদিক সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের ফোন দিয়ে সাঈদীকে ছেড়ে দিতে বলেন।”
তার অভিযোগ, ছাত্রলীগের মধ্যে শিবির থেকে আগত অনুপ্রবেশকারীরা গেস্টরুম, সভা-সমাবেশে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক টানত, এমনকি নির্বাচনে কারচুপি করত। এদের কেউ কেউ বর্তমানে শিবিরে সক্রিয়।
উভয় পক্ষের ‘নিজেদের লোক’ বাঁচানোর অভিযোগ
কাদের প্রশ্ন তোলেন, “শিবির দাবি করছে, তাদের কেউ ছাত্রলীগে ছিল না। তাহলে তারা তাদের বিগত এক যুগের হল ও শাখা কমিটি, এমনকি ৫ আগস্ট পরবর্তীকালের কমিটিও প্রকাশ করছে না কেন?”
তার ভাষ্য মতে, “জুলাইয়ের সহিংসতার পর শিবির ও ছাত্রলীগ উভয়ই তাদের নিজেদের লোকদের বাঁচাতে সক্রিয় ছিল। যার ফলে তদবির ও দোষ ঢাকতে গিয়ে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে গেছে।”
ছাত্ররাজনীতিতে এ ধরনের স্ক্রিনশট প্রকাশ এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়া নিয়ে সাদিক কায়েম মন্তব্য করেন, “এটা একটি ঘৃণ্য সংস্কৃতির সূচনা। এতে অবিশ্বাস ও অনাস্থার পরিবেশ তৈরি হবে, যা ছাত্ররাজনীতিকে আরও কলুষিত করবে।”
এই ঘটনা শুধু এক ব্যক্তিগত স্ক্রিনশট ঘিরে নয়, বরং পুরো ছাত্ররাজনীতির গোপন সম্পর্ক, অনুপ্রবেশ, এবং সুশাসনের ঘাটতির আড়ালে থাকা জটিল বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। সামাজিক মাধ্যমে ‘স্ক্রিনশট পলিটিক্স’-এর এ লড়াই কতদূর গড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।