নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়দাবাদ গ্রামে গভীর রাতে অস্ত্র প্রশিক্ষণের নামে নতুন আতঙ্কের জন্ম হয়েছে। স্থানীয় সূত্র ও এলাকাবাসীদের অভিযোগ, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিয়মিতভাবে এই প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন। এ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট জসিম উদ্দিন এবং নজরুল ইসলাম।
সূত্র জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে একাধিকবার গভীর রাতে সায়দাবাদ স্কুল মাঠে চলে এই প্রশিক্ষণ। গুলির শব্দ, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের মহড়া এবং ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজে চরম আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের ভাষ্যমতে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা পরবর্তীতে এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি দখল, ও লুটপাটে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে সায়দাবাদ গ্রামটি ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, দীর্ঘদিন ধরে রায়পুরার চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে। এলাকাটিতে দুই প্রভাবশালী নেতা হানিফ মাস্টার ও এরশাদ গ্রুপ বারবার সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে হানিফ মাস্টারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং শ্রীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম নিজ নামে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন।
২০২৪ সালের ২২ আগস্টের ঘটনা এই পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে, যেখানে শাহ আলম বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান এক গৃহবধূ, একজন নবম শ্রেণির ছাত্রসহ মোট ছয়জন। এলাকাবাসীর দাবি, সম্প্রতি রাজধানী দখলসহ তথাকথিত ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরছে’—এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর শাহ আলম বাহিনীর সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের অন্তত ৪০-৫০ জন নেতা-কর্মী নিয়মিত এই অস্ত্র প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন। নাম উঠে এসেছে—যুবলীগের কথিত ডা. জসিম উদ্দিন, ইকবাল, সালাউদ্দিন, ইউনুস, শিপন; স্বেচ্ছাসেবক লীগের রহিম, সেলিম, হারুন, আরমান; ছাত্রলীগের রনি, মাহফুজ, বাবু প্রমুখের। তাদেরকে ভবিষ্যতে নাশকতা কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালানো আসামিরাও এলাকাটিতে আশ্রয় নিতে পারে এবং তাদের মাধ্যমেই লুট হওয়া অস্ত্রগুলো এখন এই এলাকায় অবস্থান করছে।
এমন নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী সরকারের উচ্চমহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তারা বলছেন, অবিলম্বে যৌথবাহিনী নামিয়ে এই সশস্ত্র তৎপরতা দমন না করলে, বড় ধরনের প্রাণহানি ও নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রায়পুরা থানার ওসি মো. আদিল মাহমুদ বলেন, “আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। চর এলাকায় অস্ত্র তো আছেই। সায়দাবাদ, শ্রীনগর, বাঁশগাড়ী, চানপুর—সব জায়গায় অস্ত্র আছে। আবার কিছু উদ্ধারও হচ্ছে।”
রায়পুরা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বায়েজিদ বিন মনসুর জানান, “এখানে দুইটি গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ হয়। গোপনে তারা অনেক কিছুই করে। তবে এলাকা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় অভিযান পরিচালনায় সমস্যা হয়, তবু ইতোমধ্যে কিছু অস্ত্র ও আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
নরসিংদীর ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ হক বলেন, “অস্ত্র প্রশিক্ষণের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। ছবিগুলো ওই স্থানের কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে যদি প্রমাণ হয়, তারা ওই এলাকারই কেউ, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”