২০০৪ সালের ভয়াল ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় খালাস পাওয়া আসামিদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর। সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের রায় ঘোষণা করবে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ (Dr. Syed Refat Ahmed) এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বেঞ্চ টানা পাঁচ দিনের শুনানি শেষে রায়ের দিন ধার্য করেন। শুনানির পঞ্চম দিনে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে।
মামলার ইতিহাস বলছে, ২০১৮ সালে নিম্ন আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর (Lutfozzaman Babar), সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। একই রায়ে তারেক রহমান (Tarique Rahman) সহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
তবে, গত বছরের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এক রায়ে সব আসামিকে খালাস দেন। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাষ্ট্রপক্ষ চলতি বছরের ১৯ মার্চ ‘লিভ টু আপিল’ করে। আপিল বিভাগ আবেদন মঞ্জুর করলেও হাইকোর্টের খালাসের রায় স্থগিত করেনি। সেই খালাসের বিরুদ্ধে চলমান শুনানি শেষ হওয়ার পর অবশেষে রায়ের দিন ঘোষণা হলো।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় প্রাণ হারান দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন প্রায় ৩০০ জন নেতাকর্মী। ওই হামলায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। হামলার পরপরই একাধিক মামলা দায়ের করা হয়, যা আজও জাতির ইতিহাসে রক্তাক্ত অধ্যায় হয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, তদন্ত শুরু থেকেই রাজনৈতিক স্বার্থে পরিচালিত হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা হয়েছে, আসামি তালিকা পরিবর্তন করা হয়েছে, ফলে বিচারকাজ বিকৃত হয়েছে। হাইকোর্টের ভাষায়, ‘এমন একটি ভয়াবহ ঘটনায় সত্য উদঘাটন না হওয়া এবং দোষীদের আইনের আওতায় না আনা রাষ্ট্রের জন্য এক বড় ব্যর্থতা।’
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, আমরা অনুভব করি, ন্যায়বিচার নিশ্চিতে যথাযথ ও বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত। একই সঙ্গে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আদেশের অনুলিপি ঐ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ অভিমত দেন। অভিমতে হাইকোর্ট বলে, এই ঘটনায় আইভি রহমানসহ অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। স্বাধীন ও যথাযথভাবে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করা প্রয়োজন, যা আজ পর্যন্ত এই মামলায় সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত।
প্রথম চার্জশিটের ওপর নির্ভর না করে মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নতুন চার্জশিট দাখিল করা হয়। হাইকোর্ট এ চার্জশিটকে অবৈধ আখ্যা দেয়। কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ হাজির করা যায়নি যে অভিযুক্তরা হামলায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল। আদালত বলেছে, ‘সাক্ষ্য ও প্রমাণ দুর্বল, অসংগতিপূর্ণ এবং সন্দেহজনক।’