কিডনি জটিলতা ও স্ত্রীর গর্ভধারণ—জামিন চেয়ে আদালতে নানা অজুহাত তৌহিদ আফ্রিদির

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাই টিভি (My TV) চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি (Touhid Afridi)-র পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালতে তাকে হাজির করা হলে এই আদেশ দেওয়া হয়।

বেলা ২টা ২৫ মিনিটে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয় এবং হাজতখানায় রাখা হয়। এক ঘণ্টা পর কড়া নিরাপত্তায় এজলাসে নেওয়া হলে সেখানে হট্টগোল শুরু হয়। জনাকীর্ণ আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অন্যদিকে, আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খায়রুল ইসলাম আফ্রিদি রিমান্ড বাতিল ও জামিন চান।

আইনজীবী খায়রুল আদালতকে জানান, মামলার ঘটনায় আফ্রিদির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে আসাদুল নিহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। তার মতে, বাদী নিজেই শপথনামায় স্বীকার করেছেন যে ভুলবশত আফ্রিদির নাম মামলায় যোগ হয়েছে। সেই কারণে রিমান্ডের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

শুনানিতে আফ্রিদির শারীরিক অবস্থার কথাও তুলে ধরা হয়। জানানো হয়, তিনি কিডনি জটিলতায় ভুগছেন, অতিরিক্ত হাঁটাচলায় রক্তক্ষরণ হয়। একইসঙ্গে তার স্ত্রী গর্ভবতী। মানবিক কারণে জামিন চেয়ে আবেদন করা হলেও রাষ্ট্রপক্ষ তাতে সম্মত হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষে বাদীর আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন জানান, আফ্রিদি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তাকে “মিডিয়া সন্ত্রাসী” অভিহিত করে তারা বলেন, আফ্রিদি লাইভে এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাতে উস্কানি দিয়েছেন। তাকে রিমান্ডে নিলে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের পরিচয়, অর্থদাতা ও অস্ত্রদাতাদের তথ্য জানা সম্ভব হবে।

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনানি শুনছিলেন আফ্রিদি। মাঝে মাঝে মাথা নেড়ে অভিযোগ অস্বীকারও করেন। এ সময় তার আইনজীবী আবারও বলেন, তিনি আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন এবং শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পোস্ট দিয়েছেন। এমনকি আদালতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আফ্রিদির বাবা নাসির উদ্দিন সাথীর একটি ছবিও দেখানো হয়। আইনজীবীর দাবি, নাসির কোনো রাজনৈতিক দলের পদে নেই, কেবল ব্যবসায়ী।

শারীরিক জটিলতার কারণে আফ্রিদির জন্য আদালতে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধার আবেদন জানানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এজলাস থেকে হাজতখানায় ফেরার পথে আফ্রিদিকে পেটে হাত দিয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায়।

রোববার রাতে বরিশাল থেকে সিআইডি তাকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হন তার বাবা নাসির উদ্দিন সাথী। পরদিন তারও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ড শেষে ২৩ আগস্ট তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনের সময় গুলিতে আহত হয়ে নিহত হন মো. আসাদুল হক বাবু। এ ঘটনায় তার বাবা জয়নাল আবেদীন গত ৩০ আগস্ট হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। সেই তালিকায় নাসির উদ্দিন সাথী ও তৌহিদ আফ্রিদির নামও রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *