দীর্ঘ দেড় যুগ পর স্বস্তির পরিবেশে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরে এসে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি (BNP) আজ ১ সেপ্টেম্বর পালন করছে তাদের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সময়কালে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করাটাই যেখানে ছিল কঠিন, সেখানে এবার দলটির নেতাকর্মীরা নির্ভয়ে, উৎসবমুখর পরিবেশে অংশ নিচ্ছেন নানা কর্মসূচিতে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আমূল পাল্টে যায়। সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আজকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনও হচ্ছে ভিন্ন আবহে। বিএনপির দাবি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্দিষ্ট সময়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ছাড়া জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তবে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নানা শর্তারোপ করে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে, যা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি করছে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি যেমন অবারিত সুযোগ দেখছে, তেমনি সামনে আসছে বড় কিছু চ্যালেঞ্জও।

দলের ভেতরেই নানা সমস্যা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে কিছু নেতা-কর্মীর চাঁদাবাজি ও শীর্ষ পর্যায়ের অযাচিত মন্তব্য বিএনপির জন্য অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনও স্পষ্ট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তরুণ ভোটারদের আস্থা অর্জন, জোট শরিকদের প্রত্যাশা সামাল দেওয়া এবং নির্বাচনী ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট কর্মসংস্থান পরিকল্পনা ও দুর্নীতি দমন প্রতিশ্রুতি—এসবই হবে বিএনপির জন্য বড় পরীক্ষা।

আজকের দিনটি উপলক্ষে ঢাকার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারা দেশের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahman)-এর কবরে ফাতেহা পাঠ ও শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আগামী কয়েকদিন ধরে র‌্যালি, আলোচনা সভা, বৃক্ষরোপণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প এবং ক্রীড়া আয়োজন থাকবে।

দলীয় ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপির যাত্রা শুরু করেন। প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৮১ সালে তার হত্যার পর অনেকে ধারণা করেছিলেন দলটি টিকবে না। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বে বিএনপি এক দশকের মধ্যেই ক্ষমতায় পৌঁছে যায়। এরপর চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে দলটি জাতীয় রাজনীতিতে দৃঢ় অবস্থান তৈরি করে। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)-এর নেতৃত্বে সংগঠনকে সুসংগঠিত করার কাজ চলছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) দাবি করেছেন, দলের সাংগঠনিক ভিত্তি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি ফের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘‘আগামী নির্বাচন যতটা সহজ মনে করা হচ্ছে, বাস্তবে তা হবে না।’’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানোত্তর সময়ে বিএনপির সামনে যেমন নতুন করে বিকল্প শক্তি হয়ে ওঠার সুযোগ এসেছে, তেমনি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং সহিংসতাহীন, সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করা। ইতিহাস যেমন দলটিকে দৃঢ় করেছে, বর্তমান বাস্তবতাও আবার তাদের কঠিন পরীক্ষার মুখে দাঁড় করিয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *