নুরুল হক নুরের ওপর হামলা—আকস্মিক ঘটনা নাকি সুপরিকল্পিত নীলনকশা, ভেসে বেড়াচ্ছে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর (Nurul Haque Nur)-এর ওপর হামলা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে ফের উত্তপ্ত করে তুলেছে। ঘটনাটি ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে নানামুখী বিতর্ক, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এবং গভীর প্রশ্ন। এটি কি কেবল হঠাৎ ঘটে যাওয়া সংঘর্ষ, নাকি দেশের ভেতরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য আঁকা একটি সুপরিকল্পিত নীলনকশার অংশ?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে নানা দাবি। কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগের সরাসরি অর্থায়ন ও পরিকল্পনা ছিল এই হামলার পেছনে। আরও একধাপ এগিয়ে কিছুজন অভিযোগ তুলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ এতে সক্রিয়ভাবে জড়িত।

গণঅধিকার উচ্চতর পরিষদ সদস্য আব্দুর জাহের সেনা প্রধানের নিরাপত্তা অফিসার বিগ্রেডিয়ার শামস নুর ‘র নাম প্রকাশ করেই অভিযোগ করেছেন—নুরকে তিনি ফোনে হুমকি দিয়েছিলেন, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে মিছিল করলে “ভয়াবহ পরিণতি”র মুখে পড়তে হবে। সেই হুমকি সত্ত্বেও নুর মিছিল করেন এবং বিকালে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ঢিল ছোড়াছুড়ি। তবে তার এমন দাবির বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছুই জানানো হয়নি।

পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হবার পরেও রাত আটটার দিকে বিজয়নগরে গণঅধিকার পরিষদের মশাল মিছিল ফের উত্তেজনা সৃষ্টি করে। বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, নুর নিজেই সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছেন। তাদের অনেকেই মনে করছেন মূলত জামায়াত আর ইসলামী আন্দোলের প্ররোচনাতেই এমন হঠকারী পথে হাঁটেন নুরু। বিশেষ করে নির্বাচনের মাঠ থেকে জাতীয় পার্টিকে সরিয়ে দিতে পারলে দুই দিক থেকে অনেকটাই সুবিধা জনক অবস্থানে পৌঁছে যেতে পারতো জামায়াত- এক জাতীয় পার্টি মাঠে না থাকলে জামায়াতের নির্বাচনে যাওয়া – না যাওয়াটা একটা অনেক বড় দর কষাকষির বিষয় হিসাবে সামনে চলে আসবে আবার জাতীয় পার্টির অবর্তমানে আগামীর নির্বাচনে দ্বিতীয় দল হিসাবে জামায়াতের বিরোধী দল হওয়াটাও অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে। এমন সমীকরণকে সামনে রেখেই নুরুকে এমন বিপদজনক কাজে প্ররোচনা যোগায় জামায়াত। বিশেষ করে এক দিন আগেই জামাতের সাথে গণঅধিকার পরিষদ সহ সাত দলের এক বিশেষ বৈঠকও এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে বাতাস যোগায়।

অন্যদিকে নুরের ঘনিষ্ঠ মহল দাবি করছে, তারা যখন শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অকারণেই বেপরোয়া আচরণ করে। লাঠিপেটার শিকার হন নুরসহ আরও অনেকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, কর্মীদের হাতে কোনো আক্রমণের উপকরণ ছিল না, এমনকি তারা জাতীয় পার্টির অফিসেও হামলা চালাননি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ নিয়ে তাই এখন অনেক প্রশ্ন উঠছে। যদি ভিড় ছত্রভঙ্গ করাই উদ্দেশ্য হতো, তবে টিয়ারশেল বা মৃদু লাঠিচার্জই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু দুই দিক থেকে ঘিরে ধরে আক্রমণ চালানো এবং নুরকে সরাসরি টার্গেট করা পরিকল্পিত পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেয় বলেই মনে করছেন অনেকে।

এ হামলার পর রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন। তরুণ নেতা হিসেবে নুরের ওপর প্রকাশ্যে হামলা শুধু একটি দল নয়, পুরো রাজনৈতিক পরিসরকেই উত্তেজিত করেছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির ষড়যন্ত্র চলছে।

এর মধ্যেই বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের আভাস দিয়েছে রাজনৈতিক মহল। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) বর্তমানে দিল্লিতে অবস্থান করছেন এবং আওয়ামী লীগের পুনঃপ্রতিষ্ঠার নীলনকশা আঁকছেন। সম্প্রতি তিনি এস আলম গ্রুপ (S. Alam Group)-এর চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ (Saiful Alam Masud)-এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সূত্র বলছে, ওই বৈঠকে মাসুদ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা হস্তান্তর করেছেন এবং আরও দুই হাজার কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এই বিপুল অর্থ নাশকতা, সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির কাজে ব্যয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। বিদেশে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, প্রভাবশালী আমলা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা-পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে তৈরি হচ্ছে কৌশলগত নেটওয়ার্ক। একইসঙ্গে দেশের ভেতরে দলীয় ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নাশকতার প্রস্তুতিও চলছে।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, নুরের ওপর হামলাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির বৃহত্তর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতারা সংঘাত উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে, আর লুটপাটের টাকা ঘুরেফিরে সেই ষড়যন্ত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।

নুরুল হক নুরকে ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা এখন নির্বাচনের আগে দেশের জন্য বড় ধরনের অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা ডেকে আনছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *