২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্ট যে খালাসের রায় দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ (Syed Refat Ahmed)-এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেবেন।
হামলার পর মতিঝিল থানায় দুটি মামলা হয়—একটি হত্যা মামলা, অন্যটি বিস্ফোরক আইনে। তদন্তের শুরু থেকেই সেটি নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা, তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়া এবং প্রভাবিত করার অভিযোগ ছিল। এক-এগারোর সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সিআইডি নতুনভাবে তদন্ত শুরু করে এবং ২০০৮ সালে ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফেরার পর সিআইডি পুনরায় তদন্ত শুরু করে। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)সহ আরও ৩০ জনকে নতুন আসামি করা হয়। পরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচার শুরু হয়।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর আদালত রায় ঘোষণা করে। তাতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও ১৯ জন পান যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা দেওয়া হয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করলে দীর্ঘ শুনানির পর ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেয়। সেখানে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বাতিল করে সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর।
হাইকোর্ট তাদের রায়ে স্বীকার করে, ২১ আগস্টের হামলা ছিল ভয়াবহ ও মর্মান্তিক। তবে তদন্ত ছিল স্বাধীনতা ও যথার্থতা থেকে বঞ্চিত, বরং দুর্বলতা ও অসঙ্গতিতে ভরা। আদালত মন্তব্য করে, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত না হওয়ায় ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ কারণে নতুন করে পেশাদার সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এজন্য মামলার নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। তাদের দাবি ছিল, বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজাই যথাযথ ছিল এবং সেটিই বহাল রাখা উচিত। অন্যদিকে আসামিপক্ষ হাইকোর্টের খালাসের রায় বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে।
আপিল বিভাগে গত ১৭ জুলাই থেকে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। এরপর ৩১ জুলাই, ১৯, ২০ ও ২১ আগস্ট টানা পাঁচ দিন শুনানি চলে। শুনানি শেষে আদালত আজকের দিনটি রায় ঘোষণার জন্য নির্ধারণ করে।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাদাত মো. সায়েম ভূঞা ও সাদিয়া আফরিন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের হয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির।