জাকসু নির্বাচন : ৫ প্যানেল, ৫ স্বতন্ত্র প্রার্থী, নির্বাচনী দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষকদের ভোট বর্জন, পুনর্নির্বাচনের দাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ঘিরে একের পর এক অনিয়মের অভিযোগে উত্তাল ক্যাম্পাস। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে একে একে পাঁচটি প্যানেল এবং কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। ভোট শেষ হওয়ার আধঘণ্টা আগে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন শিক্ষকও। ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে এই নির্বাচনের বৈধতা, আর উঠে এসেছে পুনর্নির্বাচনের দাবি।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম (Nazrul Islam), অধ্যাপক শামীমা সুলতানা (Shamima Sultana) এবং অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান। তাঁদের অভিযোগ— ভোট শেষে হাতে অমোচনীয় কালি থাকার কথা থাকলেও তা সহজেই উঠে যাচ্ছে, কোথাও কোথাও ভোট দেওয়ার পর বাইরে থেকে কালি লাগানো হচ্ছে। অতিরিক্ত ব্যালট ছাপানোসহ নানা অনিয়মেরও অভিযোগ তোলেন তাঁরা। ড. নাহরিন ইসলাম খান বলেন, এ নিয়ে তিনি একাধিক অভিযোগ পেয়েছেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।

এদিকে, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার কিছু আগে মওলানা ভাসানী হলের গেস্ট রুমে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। তিনি অভিযোগ করেন, “আমরা জানতাম এ নির্বাচন হবে পাতানো। তাজউদ্দীন হলে ছবি ছাড়া ভোটার তালিকা থাকায় ভোট দীর্ঘসময় বন্ধ ছিল। ২১ নম্বর হলে শিবিরের প্ররোচনায় মব সৃষ্টি করা হয়। জাহানারা ইমাম হলে একই ঘটনা ঘটে। মেয়েদের হলে আইডি কার্ড বদল করে একাধিকবার ভোট দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, অধিকাংশ কেন্দ্রে অমোচনীয় কালি ব্যবহার না হওয়ায় একজন ভোটার একাধিকবার ভোট দিতে সক্ষম হয়েছেন। কোনো কোনো হলে তাঁদের প্রার্থীকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অভিযোগ ওঠে, ভোটার তালিকায় ছবি না থাকায় অন্যের হয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল দাবি করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে মিলে নির্বাচনী প্রকৌশল সাজিয়েছে। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠানে ছাপানো ব্যালট ব্যবহার ও একই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সিসিটিভি মনিটর করার প্রসঙ্গও।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী শেখ সাদী হাসানসহ অন্য নেতারা। তাঁরা অভিযোগ করেন, প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে বাধা দেওয়া, পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে না দেওয়া, এমনকি ভোট গ্রহণ চলাকালে শিবির সমর্থিত প্যানেলের পক্ষ থেকে ভোটারদের হাতে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে জাল ভোট ও ভিপি প্রার্থীকে হেনস্তার ঘটনাও তুলে ধরেন তাঁরা।

শুধু ছাত্রদল নয়, ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেলও একইভাবে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা জানান, ব্যালট বাক্স নিয়ে রাতভর হট্টগোল, শেষ মুহূর্তে পোলিং এজেন্ট ঘোষণার কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রস্তুতি নিতে না পারা, নারী হলে পুরুষ প্রার্থীর প্রবেশ, আঙুলে কালি না দেওয়া, ভোটার তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারা— এসব অনিয়ম ও গাফিলতির দায় প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের।

সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী শরণ এহসান লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, “এই ব্যর্থ ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের পরিবেশকেই কলঙ্কিত করেছে। তাই আমরা এই প্রহসনমূলক নির্বাচন বর্জন করছি এবং অবিলম্বে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।”

সব মিলিয়ে, জাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া পাঁচটি প্যানেল এবং কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। তাঁরা নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন, পুনঃতফসিল এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের দাবি তুলেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *