ডাকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ও হলভিত্তিক ভোটসংখ্যায় ব্যাপক অমিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের কেন্দ্রীয় ফলাফলে হলভিত্তিক গণনার সঙ্গে বহু প্রার্থীর ভোটসংখ্যায় মিলভ্রষ্টতা দেখা গেছে। ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে নির্বাচিত ও প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক প্রার্থী নিজের-নিজের হলভিত্তিক গণনা এবং কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য হওয়ার অভিযোগ করেছেন। পরে সমালোচনার প্রেক্ষিতে ওয়েবসাইট থেকে ভুল তথ্য সরিয়ে সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে।

নির্বাচন, অভিযোগ ও কর্তৃপক্ষের মন্তব্য

[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ](https://tazakhobor.com/tag/ঢাকা-বিশ্ববিদ্যালয়-কেন্দ্রীয়-ছাত্র-সংসদ) (Dhaka University Central Students' Union) এবং [ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়](https://tazakhobor.com/tag/ঢাকা-বিশ্ববিদ্যালয়) (University of Dhaka) সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ফলাফলে কিছু প্রার্থীর ভোট বেশি দেখানো হয়েছে আবার অনেকের ভোট কম দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক অভিযোগ উঠলে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক [অধ্যাপক জসীম উদ্দিন](https://tazakhobor.com/tag/অধ্যাপক-জসীম-উদ্দিন) (Jasim Uddin) ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘হলের ঘোষণাটিই ফাইনাল রেজাল্ট। কয়েক দিন একটানা পরিশ্রমের কারণে হয়তো হলের ভোট যোগ করতে গিয়ে ভুল করেছেন এই কাজে যুক্তরা অথবা যোগ করে বলেছেন একটা কিন্তু যিনি টাইপ করেছেন তিনি হয়তো আরেকটা শুনেছেন।’ তিনি আরও জানান যে, এসব বিষয় নিরীক্ষা করে ওয়েবসাইটে সঠিক সংখ্যা আপলোড করা হয়েছে।

প্রকাশ্য ও হলভিত্তিক গণনার মধ্যে উদাহরণসমূহ

  • আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদের প্রার্থী [মোহাম্মদ সাকিব](https://tazakhobor.com/tag/মোহাম্মদ-সাকিব) (Mohammad Sakib)—হলভিত্তিক গণনায় তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩ হাজার ৯৬২, কিন্তু ডাকসুর ঘোষিত কেন্দ্রীয় ফলাফলে ৩ হাজার ৯২২ দেখানো হয়েছিল। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যর্থতাকে আমি দালিলিক প্রমাণ হিসেবে রাখলাম।”

  • সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক [মো. লানজু খান](https://tazakhobor.com/tag/মো-লানজু-খান) (Md. Lanzu Khan)—প্রকৃত প্রাপ্ত ভোট ১ হাজার ৫৭১ হলেও প্রকাশিত ফলে ১ হাজার ৫৩১ দেখানো হয়েছিল। লানজু ফেসবুকে লেখেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলে আমার ভোট ১৫৩১টি হলেও প্রতিটি হলের ভোট গণনা করে আমার ভোট এসেছে ১৫৭১টি। ধন্যবাদ ঢাবি প্রশাসনকে। আপনাদের চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি।’

  • ফারিয়া মতিন (Faria Matin)—প্রকাশিত মোট ভোট দেখায় ২১৪৭, অথচ সবগুলো হলের সমষ্টি করলে সংখ্যা দাঁড়ায় ২১৬১; তিনি অব্যাহত প্রশ্ন রেখেছেন যে কীভাবে এমন সমন্বয় হয়েছে এবং ডাকা হচ্ছে যে ফলটি সুষ্ঠু হয়েছে।

  • সদস্য পদে আবিদ আবদুল্লাহ (Abid Abdullah) —প্রকৃত প্রাপ্ত ভোট ২ হাজার ৪২৩; কেন্দ্রীয় ফলাফলে ২ হাজার ৩৮৩ দেখানো হয়েছিল। আবিদ ফেসবুকে লিখেছেন যে প্রশাসন পরে ‘টাইপিং মিসটেক’ বলে জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেবে বলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

  • সদস্য পদে আবির হাসান (Abir Hasan) —প্রকৃত ভোট ৩ হাজার ২২৬; প্রকাশিত ফলাফলে ৩ হাজার ৩২৬ দেখানো হয়েছিল।

  • সহসভাপতি পদে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ (Riaz Uddin Ahmed) —মোট প্রকৃত ভোট ছিল ৬টি; কেন্দ্রীয় ফলাফলে ৮টি দেখানো হয়েছিল।

  • সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) আশরেফা খাতুন (Ashrefa Khatun) —প্রকৃত ভোট ৮৯০; প্রকাশিত ফল ৯০০।

  • সমাজসেবা সম্পাদক তাওহিদুল ইসলাম (Tawhidul Islam) —প্রকৃত ভোট ২ হাজার ৪৪; ফলাফলে ২ হাজার ৪৫ দেখানো হয়েছিল।

  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ফাতিন ইশরাক (Fatin Ishrak) —প্রকৃত ভোট ২ হাজার ১১; প্রকাশিত ফলে ২ হাজার ২১।

  • ছাত্র পরিবহন সম্পাদক নির্বাচিত [আসিফ আবদুল্লাহ](https://tazakhobor.com/tag/আসিফ-আব্দুল্লাহ) (Asif Abdullah)—প্রকৃত প্রাপ্ত ভোট ৯ হাজার ১০১; কেন্দ্রীয় ফলাফলে ৯ হাজার ৬১ দেখানো হয়েছিল। একই পদের অন্যান্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে মাহাথির খান নিনাদ (Mahathir Khan Ninad) ও মো. রায়হান (Md. Raihan)-এর ভোট যথাক্রমে ৬৯৪ ও ৩০৫ হলেও ফলাফলে ৭০৪ ও ৩১৫ করে দেখানো হয়েছিল (প্রতি ক্ষেত্রে ১০ ভোট বেশি)।

  • ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম (Mazharul Islam) —প্রকৃত প্রাপ্ত ভোট ৯ হাজার ৮৪৪; কেন্দ্রীয় ফলাফলে ৯ হাজার ৩৪৪ দেখানো হয়েছিল (৫০০ ভোটের বড় ফারাক)।

  • ক্রীড়া সম্পাদক চিম চিম্যা চাকমা (Chim Chimya Chakma) —প্রকৃত ৩ হাজার ৮৮৮; প্রকাশিত ফল ৩ হাজার ৭৮৮। সদস্য পদে সর্বমিত্র/সর্বমিত্র চাকমা (Sarvamitro/Sarbamitra Chakma) —প্রকৃত ৯ হাজার ৫৪৮; প্রকাশিত ফল ৮ হাজার ৯৮৮ দেখানো হয়েছিল।

এই উদাহরণগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ ও প্রশ্ন তোলার কারণ হয়েছে। অভিযোগগুলোতে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে হলভিত্তিক গণনার যোগফল কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে অন্যভাবে প্রতিফলিত হয়েছে — কখনও কম, কখনও বেশি বা গরিষ্ঠ তফাতে ভুল হয়েছে।

প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন (Jasim Uddin) বলেছেন, ভুলগুলো সম্ভবত হলের ভোট যোগ করার সময় অথবা টাইপিংয়ের কারণে হয়েছে; এসব নিরীক্ষা করে সঠিক তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলছেন যে, মোটামুটি ক্ষেত্রে হলে ঘোষিত ফলাফলই চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে এবং যে কোনো বিরোধ থাকলে সংশ্লিষ্ট নথি ও তালিকা পর্যালোচনা করে তা চূড়ান্ত করা হবে।

ডাকসু নির্বাচন-পরবর্তী কেন্দ্রীয় ও হলভিত্তিক ভোটসংখ্যায় যে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে তা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন তোলে। সমালোচনার পরে ওয়েবসাইটে সংশোধন করলেও অনেক প্রার্থী ও পর্যবেক্ষক নির্বাচনের ফলাফলে’র বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। নিজেদের মতো তৈরী করে একটি ফলাফল প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *